■ নিউইয়র্ক প্রতিনিধি ■
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে বিচারপতি পদে দায়িত্ব পেলেন সোমা সাঈদ। নিউইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টে এক ঐতিহাসিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ পদে অভিষিক্ত হন।
শপথের মুহূর্তে উপস্থিতদের করতালিতে ভেঙে যায় কোর্ট কক্ষের নিস্তব্ধতা। এ ছিল একইসঙ্গে একটি পরিবারের গর্ব ও একটি অভিবাসী স্বপ্নের বাস্তবায়নের মাহেন্দ্রক্ষণ।
গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) রাতে সোমা সাঈদের পরিবারের সদস্য বুরহান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নির্বাচনে তিনি দুই লাখ ৬০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে এই ঐতিহাসিক অর্জন সম্পন্ন করেন।
নিজের এই অর্জন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিচারপতি সোমা সাঈদ বলেন, এটি শুধু আমার নয়, আমার পরিবার, আমার সমাজ এবং আমার দেশের বিজয়।
সোমা সাঈদের পরিবারের আদিনিবাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। তাঁর বাবা ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট, মা প্রধান শিক্ষিকা। পারিবারিকভাবে পাওয়া ন্যায়বোধ, শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধই তাঁর ব্যক্তিত্ব গঠনের ভিত্তি রচনা করে। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। নতুন দেশ, ভাষা ও সমাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও তিনি নিজের লক্ষ্য অটল রাখেন। নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে পড়ালেখা শেষে তিনি সিটি কলেজ অব নিউ ইয়র্ক থেকে স্নাতক এবং অ্যালবানি ল স্কুল থেকে জ্যুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন।
গত দুই দশক ধরে সোমা সাঈদ কুইন্সে আইনজীবী হিসেবে সেবা দিচ্ছেন। তাঁর আইনি চর্চা ছিল সাধারণ মানুষ ও অভিবাসীদের পাশে থাকার এক নিরলস প্রচেষ্টা। বিভিন্ন আইনী ক্ষেত্রে তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত মানুষদের সেবা দিয়েছেন। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন যে আইন কেবল বিধির সমষ্টি নয় বরং তা মানবিকতারও প্রতীক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে থেকেও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দৃঢ়তাই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় বিচারকের মর্যাদাপূর্ণ আসনের দিকে।
২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি কুইন্স কাউন্টি সিভিল কোর্টের বিচারক নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এটি বাংলাদেশি অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক ছিল। সেই ধারাবাহিকতায়, ২০২৫ সালের নভেম্বরে তিনি বিপুল ভোটে নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নির্বাচিত হন।
তিনি নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
বর্তমানে তিনি তাঁর স্বামী মিজান চৌধুরী— যিনি একজন আইটি বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক কৌশলবিদসহ নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাস করছেন।
বিচারপতি সোমা সাঈদ বৈচিত্র্য, ন্যায়বিচার ও প্রতিনিধিত্বের প্রতি তাঁর অবিচল অঙ্গীকারের জন্য সুপরিচিত।
তিনি নিউইয়র্কের আইনি অঙ্গনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— নিউ ইয়র্ক সিটি সমঅধিকার প্রয়োগ পরিষদের সহ-সভাপতি, ন্যায়বিচারের অধিকার পরিষদের বোর্ড সদস্য, নিউইয়র্ক মার্কিন-এশীয় বিচারকদের সংস্থার সদস্য।
এছাড়াও, তিনি ছিলেন কুইন্স কাউন্টি উইমেনস বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম নারী সভাপতি।
