■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার স্থানীয় সময় ভোরবেলা রাজধানী সিউলে ইউনের ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সিউলের পাহাড়ি এলকার ওই বাসভবনে বসবাস করছিলেন ইউন। বাড়িটির চারদিক কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল এবং তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য বাড়ির বাইরে ছিল সশস্ত্র বাহিনীর একটি ছোট দল।
স্থানীয় সময় আজ বুধবার ভোরে প্রায় ৩ হাজার পুলিশ সদস্য তাঁর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হলে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে তিনি নিজেকে তদন্তের জন্য সমর্পণ করেন বলে জানিয়েছেন ইউন।
তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ইউনের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই গ্রেফতার অবৈধ এবং ইউনকে জনসমক্ষে হেয় করার জন্যই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে ইউন সুক ইয়োলই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি অভিশংসন ও গ্রেফতার পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন।
ইউনের বাড়ির আশেপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দুর্নীতি দমন সংস্থার কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন— এ খবর প্রচারিত হওয়া পর মঙ্গলবার রাতেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন ইউনের সমর্থকরা। ভোরবেলা তাকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ইউনের সমর্থকদের খানিক ধস্তাধস্তিও হয়। তবে বড় কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
গত ৩ ডিসেম্বর রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে’ সমূলে উৎপাটনের কথা বলে হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন ইউন। তার এ ঘোষণায় পুরো দক্ষিণ কোরিয়া স্তম্ভিত হয়ে যায়।
পরে প্রবল বিরোধিতার মুখে সামরিক আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু তার এই পদক্ষেপে দক্ষিণ কোরিয়া কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে পড়ে। গণতান্ত্রিক সাফল্যের গাথা রচনাকারী দক্ষিণ কোরিয়ার অর্জিত সুনাম নষ্ট হওয়ার হুমকি তৈরি হয়। বিরোধী দলের অভিশংসন প্রস্তাবের মুখে পড়েন ইউন।
প্রথম দফা অভিশংসনের পর গত ১৪ ডিসেম্বর ইউনকে বরখাস্ত করেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। তবে দায়িত্ব ও ক্ষমতা হারালেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এখনও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে আছেন ইউন সুক ইয়োল।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি করাপশন ইনভেস্টিগেশন অফিস ফর হাই র্যাংকিং অফিশিয়াল বা সিআইওর (উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্ত দপ্তর) তদন্তে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও এটি অবৈধ তদন্ত, তবু অপ্রত্যাশিত রক্তপাত এড়ানোর জন্য আমি স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পরে ইউনকে গ্রেফতার করে নিয়ে একটি গাড়িবহর সিউলের অভিজাত এলাকা বেভারলি হিলস থেকে তদন্ত কর্মকর্তাদের দপ্তরে পৌঁছায়। তবে নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়িটি দ্রুত ভবনের পেছনে নিয়ে গেলে ইউন সাংবাদিকদের এড়িয়ে গোপনে ভেতরে প্রবেশ করেন।
কর্তৃপক্ষের হাতে এখন ইউনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় রয়েছে। এরপর তাঁকে ২০ দিন পর্যন্ত আটক রাখার অনুমতি চাইতে হবে বা মুক্তি দিতে হবে। ইউনের আইনজীবীরা বলছেন, গ্রেফতার পরোয়ানা অবৈধ, কারণ এটি ভুল বিচারিক অঞ্চলের আদালত থেকে ইস্যু করা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটির আইনগত বৈধতা নেই। ইউনের বাসভবনে তল্লাশি চালানোর পরোয়ানায় তাঁকে ‘অভ্যুত্থানের নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ দক্ষিণ কোরীয় ইউনের সামরিক আইন ঘোষণার বিরোধিতা করলেও তাঁর দল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জনমতের দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার প্রকাশিত রিয়েলমিটার জরিপে দেখা গেছে, দলটির বর্তমান সমর্থন ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ।