:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
ইংল্যান্ডকে ফাইনালে ২-১ গোলে হারিয়ে স্পেন পেল চতুর্থ ইউরো শিরোপা। বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইংলিশদের ২-১ গোলে হারিয়ে এক যুগ পর ইউরো জিতল স্প্যানিশরা।
প্রথমার্ধে নিজের ছায়া হয়ে থাকা লামিনে ইয়ামাল ছিলেন স্পেনের গোলের মূল কারিগর। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে লামিনে ইয়ামালের নিখুঁত পাসে দৌড়ে এসে বাঁ-পায়ের শটে পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেন উইলিয়ামস। গোলের আনন্দে মেতে ওঠে স্প্যানিশরা।
৬৬ মিনিটে বক্সের ভেতরে বাঁ প্রান্ত থেকে ইয়ামালের শর্ট পিকফোর্ডের হাতে না লাগলে চলে যেত জালে। পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড সমতায় ফেরে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে। বুকোয়া সাকার মাইনাস থেকে বেলিংহাম একটু পেছনে বাড়িয়ে দেন। বাঁ পায়ের শটে বদলি কোলে পালমারের বাঁ পায়ের নিখুঁত শট চলে যায় জালে। স্পেন গোলরক্ষক উনাই সিমোন ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি।
৮২ মিনিটে দারুণ একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল লা ফুরিয়া রোজারা। ১৭ বছরের ইয়ামালের শট ঠেকিয়ে আবারও ত্রাতা হয়ে ওঠেন গোলরক্ষক পিকফোর্ড। তবে ৮৬ মিনিটে বদলি মিকেল ওয়ারজাবালার গোলে মেতে ওঠে স্পেনের গ্যালারি। থেমে যায় ইংলিশদের চিৎকার। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই আনন্দে মেতে ওঠে স্প্যানিশরা। ইংলিশরা তখন হতাশায় নিমজ্জিত।
আবারও স্বপ্নভঙ্গ ইংল্যান্ডের। বছর তিনেক আগে প্রথমবার ইউরোর ফাইনালে উঠে নিজেদের মাঠ ওয়েম্বলিতে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল গ্যারেথ সাউথগেটের দল। এবার হারল স্পেনের বিপক্ষে।
১৯৬৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে আর কোনো বড় শিরোপার মুখ দেখেনি ইংল্যান্ড। সেই অপেক্ষা তাদের আরও বাড়ল। টানা দুইবার ইউরোর ফাইনাল খেলেও জিততে পারল না শিরোপা। আর স্পেন ২০১২ সালের পর আবারও বসল ইউরোপের সিংহাসনে। জাভি-ইনিয়েস্তাদের সোনালি প্রজন্মের হাত ধরে ২০০৮ ও ২০১২ সালে টানা দুই ইউরো জিতেছিল স্পেন। মাঝখানে ২০১০ সালে স্বাদ পায় প্রথম বিশ্বকাপের। আর কোনো দলের চার বছরে তিনটি প্রধান শিরোপা জেতার কীর্তি নেই। এ নিয়ে সর্বোচ্চ চারবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হলো স্পেন। ছাড়িয়ে গেল তিনবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ।
রাতে ইউরোর ফাইনালের প্রথমার্ধটা শেষ হয় গোলশূন্য ব্যবধানে। তবে ৭০ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল স্পেন। ৪৫ মিনিটে সেট পিস থেকে পাওয়া বলে ফিল ফোডেন দারুণ এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। সেটিই ছিল প্রথমার্ধে স্পেনের গোলমুখে নেওয়া ইংল্যান্ডের প্রথম শট।
ফাইনালে স্পেন খেলতে নেমেছিল তাদের পরিচিত ৪-২-৩-১ ছকে। ইংল্যান্ডের ছক ছিল ৩-৪-২-১। তিন জন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারে শুরু করলও কয়েক মিনিটের মধ্যে বদলে যায় ইংল্যান্ডের সে ছক। স্পেনের লাগাতার আক্রমণের চাপে ৪-৪-২ ছকে চলে যায় ইংল্যান্ড। স্পেন যখন আক্রমণে উঠছিল, তখন ইংল্যান্ডের আট জন রক্ষণে নেমে যাচ্ছিলেন। শুধুমাত্র হ্যারি কেইন ও জুড বেলিংহ্যাম সামনে ছিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পুরোপুরি পাল্টে যায় স্পেন। বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে হ্যারি কেইনের একটি শট রুখতে গিয়ে চোট পান রদ্রি। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি আর নামেননি। তাতে কী! উল্টো রদ্রিকেই ছাড়াই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে স্প্যানিশরা।
প্রথমার্ধে ডিফেন্ডার লুক শ বেশ চোখে চোখে রেখেছিলেন লামিনে ইয়ামালকে। তবে একটু ফাঁক পেতেই স্প্যানিশ তারকা করলেন কাজের কাজটা। ৪৭ মিনিটে লামিনের বাড়ানো বল থেকেই দারুণ এক শটে বল জালে পাঠান নিকো উইলিয়ামস। গোল হজম করে থতমত খেয়ে যাওয়া ইংলিশদের আরও চেপে ধরে লুইস দে লা ফুয়েন্তের শিষ্যরা। ৫৫ মিনিট পর্যন্ত আরও বেশ কয়েকবার গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল স্পেন।
৬৪ মিনিটে বেলিংহামের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট চলে যায় ইংল্যান্ডের গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে। মিনিট খানেক পর লামিনে আবারও ঢুকে পড়েন ইংল্যান্ডের বক্সে। চাপ সামলে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া সাউথেগেটের দল সমতায় ফিরতে ধার বাড়ায় আক্রমণে। ফলটাও পেয়ে যায় দ্রুত। কোবি মাইনোর বদলি হিসেবে ৭০ মিনিটে মাঠে নামার তৃতীয় মিনিটে দর্শনীয় গোলে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান কোল পালমার। অনসাইড দিয়ে ঢুকে পড়া বুকায়ো সাকা বল বাড়ান বক্সে থাকা বেলিংহামের দিকে। মার্কিংয়ে থাকায় ইংলিশ মিডফিল্ডার প্রায় শুয়ে পড়ে বল ঠেলে দেনি পালমারের দিকে। চেলসি তারকার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নিচু শটে খুঁজে নেন জাল। সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও বদলি নেমে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন পালমার। অন্তিম সময়ে ওলি ওয়াটকিনসের জয়সূচক গোলটিতে অ্যাসিস্ট করেছিলেন চেলসি মিডফিল্ডার।
৮১ মিনিটে আরেকটি দারুণ আক্রমণ চালালেও গোল পায়নি স্পেন। ৮৬ মিনিটে আবারও উদ্যাপনে মেতে ওঠে তারা। মার্ক কুকুরেলার পাস থেকে সুইপ করে স্পেনকে এগিয়ে দেন বদলি নামা মিকেল ওয়ারজাবাল। পরের মিনিটে বেলিংহামের বাড়ানো বল বক্সে থাকা ওয়াটকিনস কাজে লাগাতে পারলে সমতায় ফিরতে পারত ইংল্যান্ড। ৯০ মিনিটে স্পেনকে বাঁচান দানি ওলমো। গোলরক্ষকের ফেরানো বলে হেড নিয়েছিলেন ডেকলাইন রাইস। লাইন থেকে দারুণভাবে হেডে বল ফিরিয়ে দেন ওলমো। শেষ পর্যন্ত যোগ করা চার মিনিটেও আর সমতায় ফিরতে পারেনি ইংল্যান্ড। আবারও তাদের হৃদয় ভাঙল ফাইনালে।