আ.লীগের মিছিল থেকে আটক বাকপ্রতিবন্ধী সাঈদের জামিন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

রাজধানীর গুলিস্তানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেফতার বাকপ্রতিবন্ধী সাঈদ শেখকে (২২) জামিন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন তাঁকে জামিন দেন।

গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের পাশে গত মাসের ২৪ আগস্ট ঝটিকা মিছিল করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ, যেখান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এরপর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা করে।

পুলিশের মামলায় বলা হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার পাশাপাশি বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে আসামিরা রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেন এবং সমাবেশ আয়োজনের চেষ্টাও করেন। পরদিন তাঁদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর কয়েক দফা জামিনের আবেদন করা হয় সাঈদের পক্ষে।

সাঈদের আইনজীবী আদালতে প্রশ্ন তোলেন, ‘বাক্‌প্রতিবন্ধী কীভাবে স্লোগান দেবেন? সাঈদের হাত দিয়েও কোনো কাজ করতে পারেন না।’

তবে পুলিশের দাবি, সাঈদ মিছিলের সামনে থেকে স্লোগান দিয়েছেন। অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার এসআই মাকসুদুল হাসান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সাঈদ একজন বাক্‌প্রতিবন্ধী।

পরে আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাকসুদুল হাসান আদালতে হাজির হন। কারাগার থেকে হাজির করা হয় সাঈদকেও। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সাঈদ একজন তোতলা। তবে প্রতিবন্ধী নন। তোতলাকে বাকপ্রতিবন্ধী বলা যায় না। আগের প্রতিবেদনে ভুল তথ্য উল্লেখ করা হয়েছিল।

ওই দিন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন আদেশ দেন, সাঈদ প্রতিবন্ধী কি না, সে বিষয়ে জেলকোডের বিধান অনুযায়ী একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করে ১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপারকে এই আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই প্রতিবেদন জেল কর্তৃপক্ষ আদালতে পাঠায়নি। পরে আজ জামিন শুনানি শেষে আদালত সাঈদকে জামিন দেন।

সাঈদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জের খাসহাটে বাবা-মায়ের কাছে না থেকে নানি ও মামার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় থাকতেন সাঈদ। প্রতিবন্ধী সাঈদ যখন-তখন যেখানে সেখানে চলে যেতেন।

সাঈদ কীভাবে ঢাকায় এসে একটি মিছিলের সঙ্গে মিশে গেছেন, তা তাঁর পরিবারের কেউ জানতেন না। সাঈদের মা সুমি বেগম আদালত চত্বরে জানান, তিনি কীভাবে ঢাকায় গিয়ে একটা মিছিলে গেছেন, এটা কেউ জানেন না।

সাঈদের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি বলেন, একজন বাক্‌প্রতিবন্ধীকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো অমানবিক। যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত জামিন পেয়েছেন সাঈদ।

কারাবন্দী সাঈদকে বাকপ্রতিবন্দ্বী দাবি করে করে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছে তার পরিবার। 

সাঈদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। মুন্সিগঞ্জের খাসহাটে বাবা-মায়ের কাছে না থেকে নানি এবং মামার সঙ্গে নারায়নগঞ্জের পাগলায় থাকত ২২ বছর বয়সী সাঈদ। সেখান থেকে কীভাবে গুলিস্তানে এল, তা বুঝতে পারছে না পরিবার। তবে মাঝেমধ্যে একা একা সে অনেক জায়গায় চলে যেত বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

সাঈদের মা সুমি বলেন, ‘ও হাত দিয়ে নিজে ভাত খেতে পারে না। কোনো কাজ নিজে করতে পারে না। দৌড়াতে গেলে পড়ে যায়; কথাও ভালো বোঝা যায় না। ওর মত একটা প্রতিবন্ধী ছেলে জেলে আছে; টেনশন হচ্ছে। কীভাবে কী করতেছে! একদিন জেলেখানায় দেখা করতে গিয়ে শুনেছি, জেলখানায় কিছু খায়নি। আমরা পুরো পরিবার দুশ্চিন্তায় আছি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেটার মুক্তি চাই।’

সাঈদের মামা সুমন বলেন, ‘জন্মের পর থেকে ছেলেটা আমাদের কাছে। বাবা-মায়ের কাছে থাকে না। ডাক্তার বলছে ওকে ছেড়ে দিতে। এতে হয়ত ও একটু স্বাভাবিক হবে। ও প্রতিবন্ধী, রাজনীতি বোঝে না। প্রতিবন্ধী ছেলেটা জেলখানায়। আমরা ওর মুক্তি চাই। যে নিজের কাজটা নিজে করতে পারে না, সে কীভাবে রাজনীতি করবে?’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *