ধসে পড়ল মোঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির গম্বুজ, নিহত ৬

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

দিল্লির দক্ষিণাঞ্চলীয় পূর্ব নিজামুদ্দিনে মোঘল বাদশা হুমায়ুনের সমাধির গম্বুজের একটি অংশ ধসে পড়ে এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকাল প্রায় ৪টা ৩০ মিনিটে হুমায়ুনের সমাধির গম্বুজের একটি অংশ ধসে পড়ে। এতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন অন্তত ১২-১৫ জন দর্শনার্থী। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১২ জনকে উদ্ধার করে। 

বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের খবরে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ রয়েছেন। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ-পূর্ব জেলা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার জানান, নিহত দুই পুরুষের বয়স যথাক্রমে ৭৯ ও ৩৫ বছর এবং তিন নারীর বয়স ৪২, ৪০ ও ৪০ বছর।

১৬’শ শতকের মধ্যভাগে নির্মিত হুমায়ুনের সমাধিটি ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং দিল্লির অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র। শুধু ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এখানে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এসেছেন। যদিও এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সমাধিতে ৬ লাখ ১৫ হাজার দর্শনার্থী এসেছিলেন, যা ২০২১-২২ সালের ২ লাখ ৩৮ হাজার দর্শনার্থীর তুলনায় অনেক বেশি।

স্থাপনাটির সংরক্ষণে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তর (এএসআই) ও আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার (একে টিসি) যৌথভাবে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রকল্প চালিয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০০-এর দশকের প্রথমভাগ পর্যন্ত চলা এই সংস্কারে মোঘল বাগান পুনর্গঠন, নষ্ট পাথরের অংশ প্রতিস্থাপন, ঐতিহ্যবাহী পানির চ্যানেল পুনঃস্থাপন এবং ক্ষতিকর সিমেন্টের স্তর অপসারণের মতো কাজ করা হয়।

শুক্রবারের দুর্ঘটনার পর এই শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সংরক্ষণ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এখনো ধসের সঠিক কারণ জানা যায়নি এবং অবশিষ্ট কাঠামোর অবস্থা সম্পর্কে কোনো সরকারি তথ্য দেওয়া হয়নি। উদ্ধার কাজ শেষ হলে কাঠামোগত জরিপ ও মূল্যায়ন শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

মৌসুমি বৃষ্টির ফলে সমাধিক্ষেত্রের গম্বুজের কাঠামো দুর্বল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না হওয়া কিংবা কাঠামোগত কোনও ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয় মোঘল বাদশা হুমায়ুনের সমাধি ১৫৬২ সালে তার স্ত্রী হামিদা বানু বেগম -এর উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়। বেলেপাথরে তৈরি এই স্থাপনাটি নকশা করেছিলেন বুখারার স্থপতি মির্জা গিয়াস। মোঘল ইতিহাসে এটিই প্রথম উদ্যান-সমাধিক্ষেত্র, যা পরবর্তীতে তাজমহলসহ বহু মোঘল স্থাপত্যে প্রভাব রেখেছে। সমাধিক্ষেত্রটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। পুরাতত্ত্ববিদরা একে মোঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করেন।

১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে বাবর দিল্লি দখল করলেও, ১৫৫৬ সালে হুমায়ুনের মৃত্যুর পর এই সমাধি নির্মিত হয়। শের শাহ সুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হয়েও তিনি পুনরায় দিল্লি শাসন করেন। পুরানা কিল্লার নিকটবর্তী এই সমাধি দিল্লির অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক গৌরব।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *