ঢাবির সহ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মামুন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

দাবি পূরণ না হলে রাজধানীর নিউমার্কেট থানা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি, ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এর আগে, দুপুরে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে ৭ কলেজের অধ্যক্ষদের জরুরি সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজ না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত আসার পর সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা কলেজের মিলনায়তনে সাত কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সভা শেষে সাংবাদিকদের তাঁরা এসব কথা বলেন।

সন্ধ্যায় সাত কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুঈনুল ইসলাম বলেন, ‘একটা শান্তিপূর্ণ দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে। ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের একজন শিক্ষার্থীও তোরণ পার হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমরা এই সশস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই বিষয়টার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সকালে সংবাদ সম্মেলন করে আমরা ছয় দাবি উপস্থাপন করেছি। সেখানে একটি দাবি ছিল অধিভুক্তি বাতিল করার যৌক্তিক দাবি আমলে নেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেওয়ায় আমরা তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি।’

এখনো আরও পাঁচ দফা দাবি বাকি আছে—এ কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের এই প্রতিনিধি বলেন, এই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার বিষয়ে এখনো কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি নিয়ে আসার সম্পূর্ণ দায়ভার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্যের (অধ্যাপক মামুন আহমেদ)। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এই দাবি যদি মেনে না নেওয়া হয়, তাহলে নিউমার্কেট থানা ঘেরাও করা হবে।

মুঈনুল আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সহ–উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমাদের দাবি মেনে না নেয় এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে, তাহলে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের সামনে দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ কোনো যানবাহন চলবে না।’

এর আগে অধিভুক্তি বাতিল ও ঢাবির প্রো-ভিসির পদত্যাগ চেয়ে রোববার বিকালে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সায়েন্সল্যাব মোড়, টেকনিক্যাল মোড় এবং তাঁতীবাজারে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন। রাত সাড়ে ১০টায় সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন এবং ঢাবি প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা প্রথমে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ঢাকা কলেজের আবাসিক হল থেকে আরও শিক্ষার্থী নিয়ে তারা ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করেন।

এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

রোববার রাতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার সংঘর্ষের পর সোমবার জরুরি বৈঠকে অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে সেই সিদ্ধান্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। সেই হিসেবে প্রায় আট বছর ঢাবির অধীনে ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম চলে সাত কলেজে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *