অনির্দিষ্টকালের জন্য তিতুমীর কলেজ শাটডাউন ঘোষণা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■  

সরকারি তিতুমীর কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ‘অনশন এবং ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় কলেজের মূল ফটকের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ‘তিতুমীর ঐক্য’র উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান মুক্তার বলেন, ‘সোমবার বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি অব্যাহত থাকবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য তিতুমীর কলেজ শাটডাউন ঘোষণা করা হলো। এ ছাড়া সোমবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা এমনকি প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।’

মাহমুদুল হাসান মুক্তার আরও বলেন, দাবি আদায়ের আগপর্যন্ত তিতুমীরে কেউ ঢুকতে পারবে না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে। আমরা গতকালই আজকের অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। এর আওতায় থাকবে মহাখালী, রেল গেট, আমতলী ও গুলশান লিংক রোড। এর আগে আমরা বিশেষ বিবেচনায় আমাদের কর্মসূচি শিথিল করেছিলাম। কিন্তু আগামীকাল থেকে আর শিথিল করা হবে না।

মাহমুদুল হাসান মুক্তার বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর আমাদের একটি ধারণা হয়েছিল যে শিক্ষার্থীবান্ধব একটি রাষ্ট্র হবে। যারা শিক্ষার্থীদের কথাগুলো চিন্তা করবে। আমাদের এসব কর্মসূচির জন্য অনেকেই আমাদের ওপর রাগ করে আছেন। আমরা তাদের কাছে ক্ষমা চাই। আমরা আপনাদের সন্তান। রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা ঘোষণা করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো-

এক. তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।

দুই. শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।

তিন. তিতুমীর কমিশন গঠনে আইন উপদেষ্টা বাধা দিয়েছেন। এর তদন্ত করতে হবে। আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

তবে তিতুমীর কলেজে সোমবার সরস্বতী পূজার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে প্রায় ২ ঘণ্টার অবরোধ শেষে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়েন বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকাল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার কোনো পরিকল্পনা অন্তর্বতীকালীন সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় নির্বাহী পরিষদের (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সিদ্ধান্ত জানান।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার কাজ চলছে, তাতে তিতুমীর কলেজও থাকবে। শুধু তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হবে না। এই দাবির কোনো যৌক্তিকতাও নেই। কারণ একটা সুশাসন ও সংস্কারের জন্য আমরা এসেছি।’

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশের মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকই গঠিত হয়েছে সবশেষ সাত বছরে, যা বিশ্বে এক অনন্য রেকর্ড। আন্দোলন করা ভালো, কিন্তু পরীক্ষাও দিতে হবে। নিয়মিত ক্লাস যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং জনদুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে নজর রেখে কর্মসূচি দেওয়া উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, দেশে অনেক ঐতিহ্যবাহী কলেজ আছে। যেমন, রাজশাহী কলেজ সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আগে হয়েছে। তাহলে সেখানেও কি বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে? বর্তমানে পঞ্চাশের উপরে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার অর্ধেকই হয়েছে গত ৭ বছরে। এসবের বাইরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চাপ সৃষ্টি করবে। আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না, যাতে আগামী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *