■ বিনোদন প্রতিবেদক ■
কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন মারা গেছেন। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে সান ফ্রান্সিসকো শহরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন জাকির হোসেনের বন্ধু বাঁশিবাদক ও সংগীতজ্ঞ রাকেশ চৌরাসিয়া।
জাকির হোসেনের বন্ধু রাকেশ চৌরাসিয়া জানান, ৭৩ বছর বয়সী জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন। পরে গত এক সপ্তাহ ধরে সান ফ্রান্সিসকোর হাসপাতালে হৃদরোগজনিত সমস্যার জন্য ভর্তি ছিলেন।
জাকির হোসেনের কলকাতায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। তবে শারীরিক অসুস্থতা জন্য বাতিল হয় অনুষ্ঠান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। সেখানে তিনি মারা যান।
জাকির হোসেনের পরিবার সংবাদমাধ্যমকে তার শারীরিক অসুস্থতার কথা প্রথম জানান। একটি বিবৃতিতে তখন বলা হয়, তবলাবাদক, সংগীতজ্ঞ, প্রাক্তন অভিনেতা ওস্তাদ আল্লা রাখার ছেলে ওস্তাদ জাকির হোসেনের অসুস্থ। পরিবার তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনার অনুরোধ জানিয়েছে।
ভারত ও ভারতের বাইরে অনেক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও মিউজিক গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত আইরিশ গায়ক ভ্যান মরিসন ও ব্রিটিশ মিউজিক গ্রুপ ‘লন্ডন স্ট্রিং কোয়ার্টলেট’। ভারত সরকারের পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন জাকির হুসেন।
ভারত ও বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান এই শিল্পী পাঁচবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন, যার মধ্যে চলতি বছরের ৬৬তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে তিনি তিনটি পুরস্কার অর্জন করেন। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী হিসেবে জাকির হোসেন ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হন। ছয় দশকের দীর্ঘ সংগীত জীবনে তিনি অসংখ্য ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন।
জাকির হোসেনের জন্ম ভারতের মুম্বাইয়ে ১৯৫১ সালের ৯ মার্চ। জাকির হোসেনের বাবা ওস্তাদ আল্লারাখা খানও একজন প্রখ্যাত তবলাবাদক ছিলেন। জাকির হোসেন শৈশব থেকেই তবলা বাজানোয় দক্ষতা অর্জন করেন।
ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাকির হোসেনকে। ১৯ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাহচর্যে ১৯৭০ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
তবে ১৯৭৩ সালে ইংরেজ গিটারবাদক জন ম্যাকলাফলিন, বেহালাবাদক এল শংকর এবং পারকাশনিস্ট টি এইচ ‘ভিক্কু’ বিনায়াকরামের সঙ্গে তার যুগান্তকারী প্রকল্পটি সংগীতকে নতুন এক মাত্রায় পৌঁছে দেয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও জ্যাজের মিশ্রণে গড়ে ওঠা এই ফিউশন ধারা সংগীতপ্রেমীদের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা দেয়। জাকির হোসেনের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকবার্তার ঢল নেমেছে।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি৷ ১৯৭০ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান জাকির৷ শুরু হয় তাঁর আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে বিচরণ। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের ‘লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড’ অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাঁকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি৷ এর পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেন তিনি৷
সংগীতে তাঁর কর্মজীবনের সিংহভাগজুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত৷ তাঁর তবলা দিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকে৷ ১৯৯২ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’৷ এর মাধ্যমে তিনি সংগীতানুরাগীদের উপহার দিয়েছেন ভারতের ধ্রুপদি সংগীতের খ্যাতিমান সেরা সংগীতশিল্পীসহ সমকালীন বিশ্বসংগীত৷ ২০০৬ সালে ‘মোমেন্ট রেকর্ড’–এর মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবাম ‘গোল্ডেন স্ট্রিং অব দ্য সরোদ’ গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়৷