■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
ক্রিকেটার তামিম ইকবালের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে সাভারের কেপিজে হাসপাতাল থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কেপিজে হাসপাতাল ছেড়েছেন তামিম। হুইলচেয়ারে করে বের করে আনার পর অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন তামিম।
প্রটোকলসহ তামিমের অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে আসে এবং সেখানেই পরবর্তী চিকিৎসা চলবে তাঁর।
তামিমকে দেখতে রাত ১০টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
কেপিজে হাসপাতালের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর ও কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. রাজিব হাসান বলেছিলেন, তামিম আপাতত শঙ্কামুক্ত হলেও তাকে ৭২ ঘণ্টা কোথাও স্থানান্তর না করাটাই হবে সবচেয়ে ভালো। স্থানান্তর করতে গেলে কোনো ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তবে, তামিমের পরিবার সিদ্ধান্ত নেন, সন্ধ্যার পরপরই তামিমকে নিয়ে আসা হবে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে।
তামিমের শঙ্কাজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা হয়ে গেছে। তার শারীরিক জটিলতাও নেই এখন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন, হাঁটাচলা করছেন।
সোমবার সকালে হাসপাতালে তামিমকে দেখতে এসেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর। তার পরামর্শ ছিল এখনই যেন তামিমের হাসপাতাল পরিবর্তন না করা হয়। তবে পরিবারের চাওয়ার ফলে হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড আলোচনা করে বিষয়টি অনুমোদন করে।
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক রায়ান রাফসান রহমানের সঙ্গে টস করার সময়ও তামিম ছিলেন সুস্থ। তবে ফিল্ডিংয়ের সময়ই হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন তামিম। এমনকি হেলিকপ্টারে ওঠার মতো অবস্থায় ছিলেন না বিকেএসপির কাছাকাছি কেপিজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই তারকা ক্রিকেটারকে। হাসপাতালে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সে মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখতে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দিয়েছিলেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তামিম লিখেছেন, ‘এই স্পন্দন যে কোন ঘোষণা না দিয়েই থেমে যেতে পারে — এই কথাটি আমরা বার বার ভুলে যাই। গতকাল দিনটি শুরু করার সময় কি আমি জানতাম, আমার সাথে কী হতে যাচ্ছে? আল্লাহতা’আলার অশেষ রহমত আর সকলের দোয়ায় আমি ফিরে এসেছি।’
ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ -এর তত্ত্বাবধানে জরুরি ভিত্তিতে গতকাল কেপিজে হাসপাতালে তামিমের এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্টিং করা হয়। মারুফকে আজ অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু জাফর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মতে সিপিআর দেওয়া না হলে তামিমের মস্তিষ্কে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা ছিল।
দুর্দিনে তামিম যাঁদের পাশে পেয়েছেন, সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। বাংলাদেশের বাঁহাতি ব্যাটার লিখেছেন, ‘আমার সৌভাগ্য, এই বিপদের সময়ে আমি পাশে কিছু অসাধারণ মানুষকে পেয়েছিলাম, যাদের বিচক্ষণতা ও আপ্রাণ প্রচেষ্টায় আমি এই সংকট কাটিয়ে ফিরে এসেছি। কিছু ঘটনা আমাদের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়, জানিয়ে দেয় যে জীবন আসলে কতটা ছোট। আর এই ছোট জীবনে আর কিছু করতে না পারি, সবাই যেন একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ায়— এটিই আমার অনুরোধ।’

তামিমের সিপিআর দিয়েছিলেন মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরি ডালিম
তামিম ইকবালের হৃৎস্পন্দন ফেরানোর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ভূমিকা রাখেন মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরি ডালিম, চিকিৎসকরা বলেছেন, ওই সময় ঠিকঠাক সিপিআর না দিলে তামিমকে হয়তো বাঁচানো যেত না।
‘যারা তাকে সিপিআর দিয়েছিল, তখন যদি না দিত, তাহলে আজকে সুস্থ হলেও তামিমের মস্তিষ্কে সমস্যা হয়ে যেত। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল’- তামিম ইকবালের চিকিৎসা শুরুর আগে টানা ২০-২২ মিনিট ধরে সিপিআর দেওয়ার উপকারের কথা মঙ্গলবার এভাবেই বলছিলেন হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ। ওই সিপিআর প্রক্রিয়ার পর হাসপাতালে তামিমের শতভাগ ব্লক হয়ে যাওয়া রক্তনালীতে স্টেন্ট বসানো হয় ডা. মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে। সেদিন রাতে তামিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় ডা. মারুফ বলেন, “ওই সময় ঠিকঠাক সিপিআর দেওয়াটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, নইলে হয়তো তামিমকে বাঁচানো যেত না।”
তাৎক্ষনিক সিপিআর দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রশংসা আদায় করে নেওয়া মানুষটির নাম ইয়াকুব চৌধুরি ডালিম। হাসপাতালে নেওয়া পথে অ্যাম্বুলেন্সে যখন তামিম অচেতন, দেহ প্রায় নিথর, ক্রমাগত তখন সিপিআর দিয়ে গেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের এই ট্রেনার। তামিমের মুখ দিয়ে যখন ফেনা পড়তে শুরু করেছে, তখন ‘মাউথ টু মাউথ রিসাসিটেশন’ দিয়ে গেছেন তিনি। তার টানা প্রচেষ্টাই ফিরিয়ে আনে তামিমের হৃৎস্পন্দন।
তামিমের চিকিৎসায় পরের কাজগুলো করেন মারুফ ও কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রশিক্ষিত দল। দ্রুততম সময়ে এনজিওগ্রাম করে হার্টের ‘লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারি’তে ব্লক শনাক্ত করেন তারা। পরে কালক্ষেপণ না করে স্টেন্ট (রিং) বসান ডা. মারুফ।
সব মিলিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসে তামিমের এবং ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে শারীরিক অবস্থার। তবে দুপুরের পর থেকে প্রায় পুরোটা সময় হাসপাতালের চিকিৎসক দল ও তামিমের ঘনিষ্ঠদের মুখে মুখে ছিল মোহামেডানের ট্রেনার ডালিমের ভূমিকার কথা।
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন তামিম ইকবাল
সঙ্কট কাটিয়ে সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তামিম। সেখানে তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং জীবনের অনিশ্চয়তা নিয়ে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে তামিম লেখেন, “হৃদয়ের স্পন্দনই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, কিন্তু এটি যে কোনো মুহূর্তে থেমে যেতে পারে—এই সত্য আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। গতকাল দিনটি শুরুর সময় কি আমি জানতাম, আমার সঙ্গে কী ঘটতে যাচ্ছে?”
তিনি আরও বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমত আর আপনাদের দোয়ায় আমি ফিরে এসেছি। আমার সৌভাগ্য, এই বিপদের সময়ে পাশে পেয়েছি কিছু অসাধারণ মানুষ, যাদের বিচক্ষণতা ও আপ্রাণ প্রচেষ্টায় আমি এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।”
জীবনের অনিশ্চয়তা বুঝিয়ে দিয়ে তিনি সবাইকে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান, “কিছু ঘটনা আমাদের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়, জানিয়ে দেয় যে জীবন আসলে কতটা ছোট। এই ছোট জীবনে আমরা যদি কিছু করতেই না পারি, অন্তত একে অপরের বিপদে যেন পাশে দাঁড়াই—এটিই আমার অনুরোধ।”
ভক্ত-সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তামিম লেখেন, “আপনাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। সবাই আমার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি তামিম ইকবাল কিছুই না।”
তামিমের এই পোস্ট তার ভক্তদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। সবাই তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন এবং মাঠে তার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন।