■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
মোহামেডানের হয়ে ডিপিএলের ম্যাচে বিকেএসপি মাঠে অল্প সময়ের মধ্যেই দুইবার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার পর হার্টে রিং পরানো হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) দুুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল-ক্লিনিক শাখা) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান।
তিনি বলেন, তিনি (তামিম ইকবাল) একিউট এমআই বা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন, যার ফলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাইমারি পিসিআই করা হয় এবং এলসিএক্স নামের ধমনীতে ব্লক ধরা পড়ে। তাই জরুরিভিত্তিতে সেখানে স্টেন্ট (রিং) বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্লকেজ কমে গিয়ে হার্টে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, যা তাকে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, প্রথমে হাসপাতালে আসার পর তিনি ছেড়ে চলে যান, কিন্তু পরে আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে পুনরায় ভর্তি হন। তাকে ১৫ মিনিট ধরে সিপিআর দেওয়া হয়। তিনি তখন অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন এবং বর্তমানে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) আছেন। তার স্ত্রী এবং বিকেএসপি পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
হাসপাতালে আছেন তামিমের বড় ভাই নাফিজ ইকবাল এবং তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
এর আগে, বিকেএসপির মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
বিসিবির ডাক্তার মঞ্জুরুল হোসেন বলেন, তামিমের এনজিওপ্লাস্ট (বুকে রিং) করানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অবস্থান করা ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল জানিয়েছেন, তামিমের এনজিওগ্রাম করানো হয়েছে। হার্টে ব্লক পাওয়া গেছে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তামিমকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু হেলিকপ্টারে উঠানোর মতো অবস্থা তার ছিল না।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসা বিভাগের প্রধান দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন, তামিমের দুবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। প্রথমে তামিমের বুকে ব্যথা হচ্ছিল। তাই কাছেই যে হাসপাতাল সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, হার্টের ইসিজি করানো হয়। তখন একটু হালকা সমস্যা দেখা যাচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, ওর প্রথম রক্ত পরীক্ষায় একটু সমস্যা বোঝা যাচ্ছিল। তাই তামিম নিজেই বলছিল যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় চলে যাবে। ওর অস্বস্তি লাগছিল। তাই বিকেএসপির মাঠে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। হাসপাতাল থেকে ও যখন বিকেএসপিতে যাচ্ছিল, আবার ব্যথা শুরু হয়। তাই দ্বিতীয়বার ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন দেখা যায় একটা ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের মতো হয়েছে। এখন পর্যবেক্ষণে আছে।
ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতাল থেকে তামিমকে হেলিকপ্টারযোগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে আনার পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত সেটি সম্ভব হয়নি। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী জানিয়েছেন, তামিমের শারীরিক অবস্থা কিছুটা গুরুতর। আপাতত হৃদরোগ বিভাগে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তামিমকে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেই তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে।
চিকিৎসার জন্য মেঘনা এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টারও বিকেএসপিতে আসে। কিন্তু হেলিকপ্টারে নেওয়ার অবস্থায় ছিলেন না বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক।
অসুস্থতার তীব্রতা দেখে দ্রুতই বিকেএসপির নিকটস্থ কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় তামিমকে। তার আগে বিকেএসপির মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
শাইনপুকুরের বিপক্ষে আজ অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন তামিম ইকবাল। বিকেএসপি তিন নাম্বার মাঠে ফিল্ডিং করার সময়ে অসুস্থতা অনুভব করলে তিনি মাঠ থেকে উঠে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন, এরপর আবারও নামেন ফিল্ডিং করতে। তখনই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা।
তামিম অসুস্থ হওয়ায় কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। পরে মোহামেডানের বিপক্ষে ২২৩ রানের সংগ্রহ তুলতে পারে শাইনপুকুর।
তামিমের অসুস্থতার খবরে স্থগিত বোর্ড সভা
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভা ডেকেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিকেএসপিতে ডিপিএল চলাকালে তামিম ইকবাল অসুস্থ হওয়ার পর পরিচালনা পর্ষদের সভাটি বাতিল করেছে বোর্ড। এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিসিবি।
জরুরি বোর্ড সভায় আজ আলোচনায় ছিল প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে চুক্তি, অধিনায়কত্বে আসছেন কে আর নির্বাচকের শূন্য পদে বসবেন কে—তার উত্তর খোঁজার। দুপুর ১২টায় মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে বসার কথা ছিল এই সভা।
তার আগেই বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ককে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। মোহামেডানের কর্মকর্তারা তামিমের সঙ্গেই আছেন। বিসিবির কর্তারাও যাচ্ছেন তামিমকে দেখতে।
তাই বাতিল হয়েছে সভাটি। আজকের সভায় টি-টোয়েন্টি ও বাকি দুই সংস্করণে অধিনায়ক কে থাকবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত আসার কথা ছিল। সভার আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল—নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পিএসএলে খেলতে যাওয়ার জন্য ক্রিকেটারদের অনাপত্তিপত্র, নির্বাচক হান্নান সরকার চলে যাওয়ায় তার স্থানে নতুন নির্বাচক, বিপিএলের টিকিট বিক্রির রাজস্ব ভাগ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন বৃদ্ধি ও প্রধান কোচকে নিয়ে সিদ্ধান্ত।