■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
বাংলাদেশের মানুষ আর বিভেদ–বিরোধ ও প্রতিহিংসা–প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক।’ তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত বাংলাদেশে জনগণ আর বিভেদ–বিরোধ ও প্রতিহিংসা–প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না।
রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রদল।
ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে উচ্চকিত বিএনপি আগামী দিনে মানবিক মানুষ তৈরির রাজনীতি শুরু করতে চায় বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপির আগামী দিনের নীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার রাজনীতি। বিএনপির নীতি আজকের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার রাজনীতি। মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত কর্মমূখী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রাজনীতি।
‘ফ্যাসিস্ট চক্র’ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছে।
কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বিএনপি আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে কাজ করছে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যদি স্কুল পর্যায় থেকে যা যে ক্ষেত্রে আগ্রহ আছে, সেদিকে ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, এ ধরনের শিক্ষা থাকলে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। তাহলে একজন শিক্ষার্থী স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হলে তাকে বেকারত্বের অভিশাপ পোহাতে হবে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর শেষ করার পর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করতে হবে না। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপি স্কুল পর্যায় থেকে ব্যবহারিক কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর কাজ করছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে গত দেড় দশকে প্রায় ৪ কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। তোমরা ভোটার হলেও ফ্যাসিবাদ চক্র তোমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বিএনপির গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য, পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলের গত দেড় দশকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বঞ্চিত ৩ কোটি ভোটারসহ সবার সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।
তারেক রহমান বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ সারা দেশের শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার একটি আহ্বান থাকবে। মন দিয়ে শোনো কি আহ্বান জানাতে চাই, তারপর সেই আহ্বান ছড়িয়ে দাও সারা দেশে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের কাছে, যারা নতুন ভোটার। আসো তাহলে বলি সেই আহ্বান– ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক’।
তরুণের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা যা প্রয়োজন এবং নিজেদেকে যোগ্য করার জন্য তোমরা (তরুণ) সকলে তা গ্রহণ করবে, এই হোক আজকের প্রতিজ্ঞা।

শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, কর্মসংস্থান ভিত্তিক শিক্ষা, যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা, ই-কমার্স, আউটসোর্সিং, উচ্চশিক্ষায় মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তোলা, বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সারা দেশের শিক্ষার্থী, ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং তরুণ প্রজন্মের ভাই-বোনেরা এই সমাবেশে এবং সারা দেশের শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের সামনে বিএনপির গৃহীত কয়েকটি প্ল্যান প্রোগ্রাম তুলে ধরার অবশ্যই একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। কি সেই উদ্দেশ্য, কি সেই লক্ষ্য?
তিনি বলেন, সেটি হলো আমাদের প্রত্যেকেরই মা রয়েছে। একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন অর্থাৎ আগামী দিনে আমরা নবীন ও প্রবীণ সবাই মিলে তেমন একটি বাংলাদেশ করতে চাই। একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ, তেমন একটি বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই নবীন ও প্রবীণ সকলে মিলে।
তারেক রহমান ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, দেশের সব শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আজকের এই তারুণ্য আজকের এই শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ চরমপন্থার উৎখাত কিংবা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে, যার আহ্বান আজকের এই সমাবেশের সভাপতি (ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব) সকলকে দিয়ে গিয়েছে।
তিনি বলেন, গ্লোবালাইজেশনের এই সময়ে নারী-পুরুষ সকলের সামনে কিন্তু সব সম্ভাবনার দ্বার আজ উন্মুক্ত। টেকনোলজিক্যাল কারণে আমাদের এই তারুণ্য ও শিক্ষার্থীরা যাতে সব সম্ভাবনাকে সাফল্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়, এজন্য একটি বাস্তবধর্মী সুষ্ঠু নীতি পরিকল্পনা আমরা তৈরি করছি। এটি বিএনপি তরুণ প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করতে চায়, যাতে করে আগামী দিনে তোমাদের পথ চলা সহজ হয়ে যায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রতিযোগিতায় যদি টিকে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে জনগণের রায় বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এবার আমরা স্কুল পর্যায় থেকে কারিকুলামের ভেতরে আইসিটি এবং কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে আমরা প্রবর্তন করব।
তারেক রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে আছে জড়িয়ে আছে। বর্তমানে যারা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের সামনে এই ক্যাম্পাসকে জ্ঞান চর্চা এবং গবেষণার একটি নিরাপদ ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবজনক ইতিহাস আবারও ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, তোমাদের যারা উত্তরসূরি শিক্ষার্থী তাদের মনের ভেতরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমি সরাসরি কথা বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে আবাসিক হলগুলোতে বসবাস ও খাবারের মান বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে হলগুলোতে বিদ্যমান সমস্যা এবং সমাধানের একটি লিখিত প্রস্তাবনা বিএনপির কাছে উপস্থাপনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, একইভাবে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সেসব বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে সুপারিশসহ রিপোর্ট তৈরি করার জন্য ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদলের সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবু্ল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি আবু আফসার মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য দেন।
সমাবেশে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্র সমাবেশ শুরু হয়। বেলা সোয়া তিনটার দিকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।