১৭ বছর পর দেশের পথে তারেক রহমান

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

দীর্ঘ ১৭ বছর পর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ১২টার দিকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনের ফ্লাইটটি ঢাকার পথে রওনা হয়েছে। তারেক রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান রয়েছেন। আরও থাকছে তাদের আদরের পোষা বিড়াল ‘জেবু’।

তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সচিব আব্দুর রহমান সা‌নি, দ‌লের প্রেস উইংয়ের সালেহ শিবলী ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কামাল উদ্দীনের জন্য টিকিট কেনা হ‌য়েছে।

তবে আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান চাচার সহযাত্রী হচ্ছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই ছয়জনের বাইরে নিজস্ব অর্থে যারা ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসের টি‌কিট কিনেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মাহিদুর রহমান, ম‌জিবুর রহমান মু‌জিব, খছরুজ্জামান খছরু, না‌সির আহমদ শাহীন, র‌হিম উদ্দীন, আসাদুজ্জামান আহমদ,‌ গোলাম রব্বানী, মঈন উদ্দীন, জুবা‌য়ের বাবু, এম এ সাল‌াম, ডা‌লিয়া লাকু‌রিয়া প্রমুখ।

এছাড়া যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ফিন্ড, ইতালির বিএনপি নেতারাসহ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক নেতাও ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কেটেছেন। এর বাইরেও তারেক রহমানের গৃহকর্মীরাও আছেন। সব মিলিয়ে ৫০ জনের বেশি থাকছেন ফ্লাইটে।

এর আগে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৫ মিনিটে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনের নিজ বাসা ত্যাগ করেন তারেক রহমান। বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট বোয়িং ৭৮৭-৬ ড্রিমলাইনার এয়ারবাস পরিচালিত বিজি ২০২ বিজনেস ক্লাসে তারেক রহমানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন বলে জানা গেছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

এরপর সড়কপথে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। এই হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি কুড়িল-পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘এটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে। সেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন।’

সংবর্ধনার পর এভারকেয়ার হাসপাতাল ঘুরে তারেক রহমান গুলশান এভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায় যাবেন। সেখানেই তারেক রহমান থাকবেন বলে জানা গেছে।

বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে তারেক রহমানের তিন দিনের কর্মসূচির কথা জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আগামীকাল দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে তথা ৩০০ ফিট রাস্তায় সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলীর মোড় হয়ে গুলশান–২ নম্বরে বাসভবনে চলে আসবেন। সেদিন আর অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পরদিন ২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান বাসভবন থেকে প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর, শনিবারও দুটি কর্মসূচি রয়েছে। ওই দিন জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করবেন তিনি। এ জন্য তারেক রহমান সশরীর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে যাবেন কি না, সেটা পরে জানানো হবে। ওই দিনই ভোটার হতে সব কাজ করবেন। এরপর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন।

শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত শেষে সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাবেন তারেক রহমান। এরপর আরেকটি অনুষ্ঠান হবে, সেটার বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

তারেক রহমানের জন্য সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিএনপির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পূর্বাচলে ৩০০ ফিট সড়কে যে সংবর্ধনা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে তার চারপাশে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামছুল ইসলাম। গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দলের পক্ষে থেকে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে।

‘লিডার আসছে’ স্লোগানে-স্লোগানে রাতেও মুখর ৩০০ ফিট এলাকা

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট হাইওয়ে এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কুড়িল থেকে শুরু করে মঞ্চ এলাকা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। কেউ কেউ এলাকাভিত্তিক জটলা পাকিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন, আবার কেউ সমবেতভাবে মিছিলে মুখর। এককথায় সবার মনেই উৎসবের আমেজ। সবার মুখে মুখে ফিরছে একটিই স্লোগান— লিডার আসছে।

এ ছাড়া, স্লোগান-প্ল্যাকার্ড আর নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাসে পুরো এলাকা যেন বিশাল ‘উৎসবকেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে। আর নেতাকর্মীদের খাবারের জোগান দিতে পথে পথে হরেক রকমের খাবার ও পানি বিক্রি করছেন হকাররা। কিছু দূর পরপর দেখা মিলছে স্পিকারবাহী ট্রাক। সেখানে বাজছে দলীয় ও দেশাত্মবোধক গান।

পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসংখ্য সদস্য। রাত ৯টার দিকে মঞ্চ এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বাহারুল আলম। 

বিমানবন্দর থেকে এসে সরাসরি সংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত হবেন তারেক রহমান। এই প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে ৩০০ ফিট এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ৪৮ বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। গত রোববার দুপুর থেকে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমে এটি প্রস্তুত করেছেন শ্রমিকরা। সংবর্ধনা কমিটির সদস্যরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান আসবেন। ওইদিন এই এলাকা মানুষের মহামিলন ও মহামেলায় পরিণত হবে বলে আমরা নিশ্চিত।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *