তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

:: লালমনিরহাট প্রতিনিধি ::

ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান নদীর পানি বেড়েছে। এর ফলে লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী এলাকা এবং চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হবার পাশাপাশি ডুবে গেছে কয়েক হাজার একর ফসলি খেত।

শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে সকাল ৬টায়, ৯টায়, দুপুর ১২টায় এবং বিকেল ৩টায় যথাক্রমে ১০, ১৫, ২০ এবং ২৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে একই সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে যথাক্রমে ১৭, ১৭, ২০ এবং ২৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অপরদিকে ধরলা নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরলার শিমূলবাড়ি পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায়, ৯টায়, দুপুর ১২টায় এবং বিকেল ৩টায় যথাক্রমে ৩৪, ২৭, ২৪ এবং ২৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সানিয়াজান, ফকিরপাড়া, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈলমারী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর এবং গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলায় বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

জেলার নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের আনন্দ বাজার, টেপারকুঠি, বিষ্ণুপুরগ্রাম, বন্ধু বাজার, কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ঢেপঢেপি, কৃষ্ণপুর, নামাপাড়া, নুন খাওয়া ইউনিয়নের কাঠগিরিরচর, ফকিরপাড়া, রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন, রৌমারীর যাদুরচর ও সদর ইউনিয়নসহ তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে এসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

নাগেশ্বরীর টেপারকুঠি গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ‘দুধকুমারের পানি বাড়ার কারণে সকাল থেকে আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে; চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’ 

সদরের চর রসুল গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ধরলার পানিতে আমার বসতভিটা ভেঙে গেছে। তিন বিঘা আবাদী জমি নদীতে চলি গেছে।’

চর কুড়িগ্রামের বাসিন্দা শিমুল মিয়া জানান, গতকাল রাত থাকে নদীর পানি বাড়ছে। তাদের বাড়ির সামনের রাস্তা তলিয়ে গেছে; চলাচলের খুব অসুবিধা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, উজানে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় পাঁচটি পয়েন্টে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, জেলায় স্বল্প মেয়াদি বন্যার সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চর রসুলপুর, আলোরচরসহ কয়েকটি জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও ১৭ লাখ টাকা ও ১৮০ টন জিআর চাল মজুদ আছে। উদ্ধারের জন্য বেশ কিছু নৌকা প্রস্তুত করা হয়েছে। 

অপরদিকে ফসলি জমির ধানের বীজতলা, বাদাম, পাট, ভুট্টার খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে পচন ধরেছে। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পাশাপাশি তিস্তা ও সানিয়াজান অববাহিকার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন ভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন। সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিস্তার পানি বাড়ার সাথে সাথে চিনাতুলি, হরিণচড়া এলাকায় নদীভাঙনের কবলে পড়েছে স্থানীয়রা। দুইদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে কয়েক’শ পরিবার। এখনো সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা করা হয়নি পরিবারগুলোকে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার নদী, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিতে পারে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *