■ তেঁতুলিয়া প্রতিনিধি ■
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন বেলা ৩টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ওই দিন সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বাতাসে তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে এবং ৮ ডিগ্রির উপরে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে মাঝারি ও ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়ে থাকে।
ভোরেই হালকা কুয়াশা ভেদ করে দেখা গেছে সূর্য। গত দিনের তুলনায় ঘন কুয়াশা না থাকলেও কনকনে শীতে কাঁপছে উত্তর জনপদের মানুষ। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরেছে বরফ শিশির। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে কাজে বেরিয়ে পড়েছেন দিনমজুর, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, কৃষক থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ। এদিকে গতকাল রাতে শীতের কারণে হাটবাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে যেতে দেখা যায়। কাগজের কাটন, শুকনো কাঠখড়ি জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতে মনে হয়েছে তাপমাত্রা জিরোতে নেমে এসেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হাড় পর্যন্ত কেঁপেছে। সন্ধ্যার পর শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকছে। একইসঙ্গে পাহাড়ের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। সন্ধ্যার পর থেকেই গরম কাপড় পরে চলাফেরা করছে মানুষ। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে।
সকালে কথা হয় ভ্যানচালক দেলোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে যখন ভ্যানে যাত্রী নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল কনকনে ঠাণ্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। শরীরে তিন-চারটা গরম কাপড় পড়েও শিরশির করে শীত কাটার মতো লাগছিল। সন্ধ্যার পর কিংবা সকালে যাত্রী তেমন পাওয়া যায় না। শীতের কারণে ভ্যান ঠিকভাবে চালানো যায় না। ফলে উপার্জন কমে গেছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় মাত্র ২ হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছে। তা বিতরণ করা হয়েছে। এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
শীতের কারণে বেড়েছে শীতজনিত রোগব্যাধি। জেলার সদরসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা শীতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য ইতিমধ্যে সরকারিভাবে দুই হাজার কম্বল ও শীতবস্ত্র কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার কম্বল জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করেছে।
সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিক ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে ঝরছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কনকনে শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের সন্ধানে। কেউ সবজিখেতে সংগ্রহ করছেন সবজি, কেউবা তা ভ্যানে করে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন বাজারে। আবার কেউ কৃষিজমিতে হালচাষ করার পাশাপাশি বপণ করছেন নানা শাকসবজির বীজ। এরই মধ্যে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পূর্ব আকাশে উঁকি দিতে থাকে সূর্য। ধীরে ধীরে উঠতে থাকে ঝলমলে রোদ। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে থাকায় দিনের বেলাও অনুভূত হচ্ছে শীত।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে বলেন, আজ সকালে তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন রেকর্ড করা হয়েছে। এই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে। সেই সঙ্গে সকাল সকাল কুয়াশা কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি থাকবে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৮৮ শতাংশ। এর আগে ৪ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, আজ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত শীত মৌসুমে ১২ জানুয়ারি জেলার ওপর দিয়ে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ওই দিন জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই মাসের ২৩ জানুয়ারি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবেড্ডা শীত এট্টু বেশিই লাগজে। তাই বেশিক্ষণ গাড়ি চালাইনো যাচ্চে না। প্যাসেন্দারও সেরাম পাওয়া যাচ্চে না। বারোমাসির মদ্দি শীতকালই বেশি কষ্ট কত্তি হয়।’
স্থানীয়রা আরও জানায়, উত্তরের এ জেলাটি বরফের পাহাড় হিমালয় কাঞ্চনজঙ্ঘার বিধৌত এলাকা হওয়ায় অন্যান্য জেলার আগেই এ অঞ্চলে শীতের আগমন ঘটে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের দাপট বেশি হয়ে থাকে। তবে নভেম্বর থেকেই শুরু হয় শীতের আমেজ।