কিবরিয়া হত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের তিনজন

■ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ■

আজ ২৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ২০ বছর। এই হত্যায় শেখ হাসিনার খুব কাছের তিনজন জড়িত ছিলেন বলে জানান তার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ২০ বছর পার হয়ে গেছে আমার বাবাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়। তার শরীরে প্রায় ৪০০ স্পি­ন্টার বিদ্ধ হয়। একটি ভাঙা অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনি পথে মারা যান। আমরা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষা করছি। আওয়ামী লীগ আমলে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের অনেকেই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এটি আমরা জানতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি আবু জাহির, মজিদ খান এবং ডা. মুশফিক চৌধুরী জড়িত ছিলেন। হত্যার জন্য টাকা দিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান। বিভিন্ন কারণে আমার বাবার সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল। সালমান এফ রহমান তার ব্যাংকের দুর্নীতি, শেয়ার মার্কেটের কেলেঙ্কারির জন্য আব্বার ওপর ক্ষেপে ছিলেন। সে কারণেই তিনি পুরো ফান্ডিং করেছেন। তারা সবাই শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক। তাই সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। সুষ্ঠু বিচার হয়নি।

রেজা কিবরিয়া বলেন, একটি অসমাপ্ত তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার হতে পারে না। আমরা এখন আশা করছি এর বিচার হবে। তবে এ সরকারের সময় নয়। ভবিষ্যতে সুষ্ঠু বিচার হবে। আমরা সবাই সে বিচারের অপেক্ষায় রইলাম।

সূত্রমতে, দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো আলোর মুখ দেখছে না। নানা জটিলতায় বিচার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তই হয়নি বলে শুরু থেকে দাবি করে আসছে নিহতের পরিবার। তাদের অভিযোগ একটি অসমাপ্ত তদন্তের মাধ্যমে বিচার করার চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এতে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে প্রকৃত অপরাধীদের-এমন দাবি জানিয়েছেন তারা। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে হতাশা থাকলেও এখন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারটি আলোর মুখ দেখতে পারে বলে মনে করছেন নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ-পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলীও এ ঘটনায় নিহত হন।

গুরুতর আহত হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। এছাড়াও আহত হন প্রায় ৭০ জন নেতাকর্মী। এখনও তারা আঘাতের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন।  

ঘটনার পরদিন ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দু’টি মামলা করেন। পরে মামলা দু’টি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় সিআইডি। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী মজিদ খান। পরে ২০০৭ সালে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আবারও সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন্নেসা পারুল সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়াসহ আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল ও মাওলানা শেখ আবদুস সালামকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

এর আগে ২০০৫ সালের ১৮ মার্চ প্রথম দফায় ১০ জনের বিরুদ্ধে ও দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ জন থেকে বাড়িয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দু’জন ভারতে মারা গেছেন। আর তৃতীয় দফায় আসামির সংখ্যা আরও নয়জন বাড়িয়ে এ মামলায় মোট আসামি করা হয় ৩৫ জনকে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *