হাইকোর্টের তিন বিচারপতির পদত্যাগ

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

হাইকোর্টের তিন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।

রাষ্ট্রপতি এই তিনজনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন জানিয়ে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) শেখ আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক সংবিধানের ৯৬ (৪) অনুচ্ছেদ মতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিয়াছেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিয়াছেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এই তিন বিচারপতিকে প্রায় ৫ বছর ধরে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।

এর আগে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সেদিন সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিশেষ কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান।

তিনি বলেছিলেন, হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়। 

একইসঙ্গে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের পর ওই তিন বিচারপতি ছুটির প্রার্থনা করেছেন বলেও জানিয়েছিলেন সাইফুর রহমান। তবে তাদের ছুটি মঞ্জুর হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এই তিন বিচারপতিকে  তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। এ কারণে কার্যতালিকায় তাদের নাম রাখা হয়নি।

বিচারপতি সালাম মাসুদ চৌধুরী ২০০২ সালের ২৯ জুলাই এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

এই তিনজনের মধ্যে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল আগামী ১২ ডিসেম্বর। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের অবসর আগামী বছর ২৭ নভেম্বর এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালের ৩০ জানুয়ারি। 

২০১৯ সালের ১৬ মে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্ন আদালতের মামলায় হস্তক্ষেপ করে রায় পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হকের বেঞ্চের বিরুদ্ধে। ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৩৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল এমআর ট্রেডিং। ঋণখেলাপি হওয়ায় ন্যাশনাল ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে এমআর ট্রেডিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। সে মামলার কার্যক্রম চালু থাকার সময় দুই পক্ষের মধ্যে আপসনামা হয় এবং সে অনুসারে টাকা নেওয়ার কথা। এরপর তারা ওই আপসনামা অর্থঋণ আদালতে দাখিল করে সে অনুযায়ী ডিক্রি চান। কিন্তু অর্থঋণ আদালত সে আপসনামার ভিত্তিতে ডিক্রি জারি করেননি। এরপর এমআর ট্রেডিং হাইকোর্টে আবেদন জানায়। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হকের বেঞ্চ রুল জারি করেন এবং আপসনামার ভিত্তিতে অর্থঋণ আদালতকে ডিক্রি জারির নির্দেশ দেন।

পরে পুনরায় অর্থঋণ আদালত ডিক্রি দেন এবং এমআর ট্রেডিং হাইকোর্টের জারি করা রুল প্রত্যাহার করে নেয়। পরে ন্যাশনাল ব্যাংক আপিল বিভাগ আপিল দায়ের করে।

সূত্রমতে, ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত এক রিট মামলায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি জারির মাধ্যমে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ রায় পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আদেশে সংশ্লিষ্ট অর্থঋণ আদালতের (নিম্ন আদালত) মামলার সব ডিক্রি ও আদেশ বাতিল করেন। এ ছাড়া বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের কারণে সেই সময় ওই তিন বিচারপতিকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *