শপথ নিলেন আরও তিন উপদেষ্টা

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেও আরও তিনজন। তারা হলেন- ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। 

রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের শপথ পাঠ করান। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। নতুন তিনজনকে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা হলো ২৪ জন।

সেখ বশির উদ্দিন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ–বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি সেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা। কয়েক দশক ধরে তিনি চলচ্চিত্র, নাটক নির্মাণ করে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।

মাহফুজ আলম বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী। তিনি ২০২৪ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য ছিলেন। মাহফুজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। 

ঢাকা ও দেশের বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা সেদিন শপথ নেননি। পরে ১১ আগস্ট শপথ নেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও বিধান রঞ্জন রায়। আর ১৩ আগস্ট শপথ নেন আরেক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। পরবর্তীতে ১৬ আগস্ট আরও চার উপদেষ্টা শপথ নেন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। বিলুপ্ত করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সরকারের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে উপদেষ্টা পরিষদে আরও সদস্য নিয়োগের পরামর্শ আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। এখন নতুন এই তিনজন উপদেষ্টা মিলিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা দাঁড়াল ২৪ জন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

১৯৭৩ সালের ২ মে ঢাকার নাখালপাড়ায় জন্ম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর। তার বাবার নাম আবদুর রব, মা কুলসুম বেগম।

২০১০ সালে বিয়ে করেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে। ইলহাম নুসরাত ফারুকী নামে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে তাদের।

১৯৯৯ সালে মিডিয়ায় পথচলা শুরু করেন ফারুকী। ছোট পর্দায় অসাধারণ কিছু টেলিফিল্ম ও সিরিয়াল নির্মাণ করেছেন তিনি। ‘স্পার্টাকাস ৭১’, ‘চড়ুইভাতি’, ‘কানামাছি’ ও ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’র মতো নন্দিত টেলিফিল্ম তৈরি করেছেন ফারুকী। পাশাপাশি ‘একান্নবর্তী’, ‘সিক্সটিনাইন’ ও ‘৪২০’ তার নির্মিত জনপ্রিয় কিছু সিরিয়াল। আনিসুল হকের ‘আয়েশামঙ্গল’ অবলম্বনে ফারুকী নির্মিত ‘আয়েশা’ নাটকটিও পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা।

সিনেমায় ফারুকীর সূচনা ‘ব্যাচেলর’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। গল্পের গাঁথুনি, নিজের প্রজ্ঞা ও মুনশিয়ানার মিশেলে সামাজিক সম্পর্কগুলোর অসংগতি নিপুণভাবে সেলুলয়েডের ফিতায় ফুটিয়ে তোলেন এই নির্মাতা। তার তৈরি সিনেমার সংলাপ থেকে শুরু করে গান—সবই হয়ে ওঠে তরুণদের ক্রেজ।

ব্যাপক সাড়া জাগায় তার নির্মিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ সিনেমাটিও। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া তার এই ছবি ‘পুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’, ‘রোটেরডেম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’, ‘ফ্রাইবুর্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ও ‘আবুধাবি চলচ্চিত্র উৎসব’-এ অফিসিয়াল সিলেকশনে ছিল।

এ ছাড়া ২০১০ সালে ‘টিবুরন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’, ‘জোগজা-নেপটেক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ গোল্ডেন হ্যানোমেন অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয় সিনেমাটি। ২০১৪ সালে ‘কেস উইক চলচ্চিত্র উৎসবে’ প্রদর্শনীর পাশাপাশি ৮৩তম অস্কারে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ফারুকী নির্মিত এই সিনেমা। ২০১২ সালে ‘টেলিভিশন’, ২০১৩ সালে ‘পিঁপড়াবিদ্যা‘ এবং ২০১৭ সালে ‘ডুব’ সিনেমা নির্মাণ করে নিজের জাত চেনান ফারুকী। ২০১৪ সালে ‘বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে’ সমাপনী ছবি হিসেবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ‘টেলিভিশন‘ সিনেমার।

বুসানে ‘এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর স্ক্রিপ্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পোস্ট-প্রোডাকশন’-এর পুরস্কার জিতে নেয় তার নির্মিত সিনেমা টেলিভিশন। এমনকি ৮৬তম অস্কারেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ‘ ছবিতে ফারুকী দেখিয়েছেন দুর্দান্ত পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। ২০০৮ সালে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে‘ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় এই সিনেমা।

সেখ বশির উদ্দিন

আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন। তিনি সেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান।

সেখ বশির উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত ‘আকিজ বশির গ্রুপ’ বর্তমানে একটি বহুমুখী গ্রুপ হিসেবে ১৮টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, বাথওয়্যার, জুট, পার্টিকেল বোর্ড, ডোরস, প্যাকেজিং, গ্লাস ইত্যাদি।

প্রতিষ্ঠানটি ৩টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ২৫টির বেশি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। একই সঙ্গে ২৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

মো. মাহফুজ আলম

মাহফুজ আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর উপজেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইসাপুর গ্রামে।

তার পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। এছাড়া ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন শুরু থেকে।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. মাহফুজ আলমকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *