ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনায় ৩ জন কারাগারে

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

তারা হলেন- তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) এবং পলাশ সরদার (৩০)।

বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামশেদ আলম কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য। এ ঘটনায় আজ সকালে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনজনই বহিরাগত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৌফিক হাসান গ্রেফতার তিনজনকে আদালতে হাজির করেন।

নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের স্যার এ এফ রহমান হল ইউনিটের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

তার সহপাঠী আশরাফুল ইসলাম রাফি জানান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বাসিন্দা সাম্য ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র। হলের ২২২ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি।

রাফি জানান, সাম্য মোটরসাইকেলে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য একটি বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সাম্যের ডান উরুতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ঘটনা তদন্ত এবং এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে সাত-সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শাহরিয়ারের সঙ্গে থাকা বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ঘটনার এমন বর্ণনা দেন। বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন রাফি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। নিহত শাহরিয়ারও একই শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ছিলেন। শাহরিয়ার স্যার এ এফ রহমান হলের শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমরা তিনজন (সাম্য, রাফি ও মো. আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ) মোটরসাইকেলে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। এ সময় আমাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলের ছোটখাটো একটা ক্ল্যাশ (সংঘর্ষ) হয়। ওই মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রীর সঙ্গে আরও তিন-চারটার মতো মোটরসাইকেলে মোট ১০-১২ জন ছিলেন। মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগার পর তাদের সঙ্গে আমাদের কথা-কাটাকাটি হয়।’

কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাদের তিনজনের ওপর ওই ব্যক্তিরা আক্রমণ করেন বলে জানান আশরাফুল আলম।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর মধ্যে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সাম্যর শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ঝরে। বলা যায়, ঘটনাস্থলেই সাম্য মারা যায়। অর্থাৎ স্পট ডেথ।’

আশরাফুল বলেন, ৬-৭ বছর তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। তাদের সম্পর্কটা শুধু বন্ধু নয়, ভাইয়ের মতো ছিল।

শাহরিয়ার আলম হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতে ও আজ দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ক্যাম্পাসে শাহরিয়ারের জানাজা হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে ঘটনা তদন্তে বুধবার সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রদল।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ করতে ৭ সিদ্ধান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে ঢাবি প্রশাসন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সভা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে এক আতঙ্কের স্থান থেকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বুধবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা জানিয়েছেন।

পোস্টে তিনি লিখেন, রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক ব্যবসা বন্ধ এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, ডিএমপি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে, নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করা হবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে, উদ্যানে রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে, রাত ৮টার পর উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। 

অবিলম্বে এ সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে এক আতঙ্কের স্থান থেকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

এ প্রক্রিয়ায় সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। ইতোমধ্যে সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

এদিকে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার সাম্য হত্যার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার। সহকারী প্রক্টর শারমীন কবির কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ঢাবিতে মশাল মিছিল

শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ঢাবি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এ মশাল মিছিল শুরু হয়।

মিছিলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

ঢাবিতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একটি মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ রাত ৮টা ২০ মিনিটে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ মিছিলে অংশ নেন।

মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন ও হলপাড়া প্রদক্ষিণ করে।

রাত পৌনে ৯টার দিকে মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

হত্যার বিচার, নিরাপদ ক্যাম্পাসের পাশাপাশি মিছিল থেকে ঢাবি ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *