■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রাজধানীর পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তারিক সাইফ মামুন (৫৬) নিহত হয়েছেন। আদালতে তিনি একটি খুনের মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার দিপা।
পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তি একসময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন, তবে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বলেন, দুজন ব্যক্তি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের প্রবেশমুখে এসে ওই ব্যক্তিকে (মামুন) পেছন থেকে গুলি করেন। বেশ কয়েকটি গুলি করার পর ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর গুলি করা ব্যক্তিরা মোটরসাইকেল পালিয়ে যান।
নিহত মামুন লক্ষ্মীপুর সদরের মোবারক কলোনির এস এম ইকবাল হোসেনের ছেলে।
মামুনের পরিবার বলছে, তিনি দুই দিন ধরে রাজধানীর বাড্ডার ভাড়া বাসায় ছিলেন। আজ সকালে একটি মামলায় আদালতে তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য তিনি সকালে বাসা থেকে বের হন।
মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার দীপা বলেন, তাঁরা ধারণা করছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের লোকজন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও ইমনের লোকজন মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।
তিনি জানান, মিরপুরে মামুনের গার্মেন্টস ব্যবসা রয়েছে। দুই মেয়েকে নিয়ে আফতাবনগরের এফ-ব্লকে থাকেন তাঁরা। তিনি আরও জানান, দুই দিন পর আজ সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন মামুন। জজকোর্টে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। এরপরই ফোনে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২–এর পেশকার মো. শাহিন বলেন, ২৯ বছর আগের একটা হত্যা মামলায় আজ হাজিরা দিতে সকালের দিকে আদালতে আসেন তারিক সাইফ মামুন। সাড়ে ১০টায় বিচারক এজলাসে ওঠেন। একটা মামলার পরই তাঁর মামলার ডাক আসে। তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাজিরা দেন। তবে এ মামলার কোনো সাক্ষী আসেনি। বিচারক আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে আদালত ছেড়ে চলে যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী জানান, গুলিতে নিহত ব্যক্তিটি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন। তিনি ইমন-মামুন গ্রুপের মামুন।
গুলির ঘটনার সিসিটিভির একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সকাল ১০টা ৫৩ সেকেন্ডে মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তখন দুই ব্যক্তি খুব কাছে থেকে তাঁকে গুলি করছেন। ঘটনাটি ঘটে তিন থেকে চার সেকেন্ডের মধ্যে। গুলি করার পর দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ দিকে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির খালাতো ভাই হাফিজ জানান, আমার ভাই তারিক সাঈদ মামুন একজন সাধারণ মানুষ। কী কারণে তাকে কে হত্যা করা হলো, আমি জামি না। সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে হত্যা করেছে, কী কারণে করেছে আমার জানা নেই।
সিসিটিভি ফুটেছে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে দুইজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এসে গুলি করে। পরে তারা নির্দ্বিধায় পালিয়ে যায়।
শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, তারিক সাইফ মামুন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী কি না বলতে বলতে পারছি না। তবে তিনি ক্যাপ্টেন ইমন গ্রুপের লোক ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ডিসি তালেব বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। আজ সে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে বের হওয়ার পরেই দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
জাহিদ আমিন হিমেল নামের ২৫ বছরের এক যুবককে ১৯৯৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুর পিসি কালচার হাউজিং এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন হিমেলের বন্ধু সাইদও আহত হন। এ ঘটনায় হিমেলের মা জাফরুন নাহার সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২–৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিক সাইফ মামুনসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অপর আসামিরা হলেন ওসমান, মাসুদ নাজমুল হোসেন, রতন, ইমন ও হেলাল। এ মামলায় আজ শুনানি ছিল।
দীর্ঘ ২৪ বছর জেল খাটার পর ২০২৩ সালে তিনি জেল থেকে বের হন।
এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তেজগাঁও সাত রাস্তায় তারিক সাইফ মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ওই ঘটনায় মামুন আহত হলেও পথচারী ভুবন চন্দ্র শীল নিহত হয়। নিহত মামুন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
