নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলছে সেন্টমার্টিন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

আগামী ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট চার মাস পর্যটকদের প্রবেশাধিকার থাকবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান এসব কথা বলেন।

প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন। প্রথম দুই মাস কেবল দিনে ভ্রমণ করা গেলেও শেষ দুই মাস দ্বীপে অবস্থান করার সুযোগ থাকবে।

সচিব নাসরীন জাহান বলেন, পর্যটন কেন্দ্র খোলার আগে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষা দুটো বিষয়ই আমাদের দেখতে হয়। সেন্টমার্টিন যেহেতু ইউএন ট্যুরিজমের হেরিটেজ এলাকা, তাই প্রবাল সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সীমিত সংখ্যক পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

তিনি জানান, পর্যটক ব্যবস্থাপনায় সফটওয়্যার চালু করা হচ্ছে, যা জাহাজ শিল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, “দিন শেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি। সেন্ট মার্টিনের প্রবাল আমাদের একটা সম্পদ। গত এক বছর নিয়ন্ত্রণ করার ফলে প্রবালে কী পরিমাণ প্রাণের সঞ্চার হয়েছে সেটা আপনারা গেলে দেখতে পারবেন। তাই আমাদের পর্যটকদের জন্য একটা আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে।

“যখন আমরা দেখব সকলে পর্যটনবিধি মানছে, প্লাস্টিক কম ব্যবহার করছে, জীবাশ্মগুলো নষ্ট হচ্ছে না, তখন আমরা ধাপে ধাপে পর্যটকদের জন্য সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হবে। তবে এখন আগের বছরের মতই চলবে।”

নাসরীন জাহান বলেন, “আমরা প্রথম দুই মাস দিনের ট্যুর চালু করব। পরের দুই মাস রাতে থাকতে পারবে পর্যটকরা। কিন্তু প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা ২ হাজারই থাকবে। এ বছর আমরা আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কন্টিনিউ করব।”

বিদেশি পর্যটক সংখ্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও অন্যান্য তথ্য অনুযায়ী ৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে এসেছেন। তবে চূড়ান্ত সংখ্যা কিছুটা কমবেশি হতে পারে।

এছাড়া পর্যটন খাতে শৃঙ্খলা আনতে আচরণবিধি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের ভেতরে পারিবারিক ভ্রমণকে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আনন্দময় করা এখন মূল লক্ষ্য। নিজেদের পর্যটন অবকাঠামো ও সেবা উন্নত হলে বিদেশি পর্যটক স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।

নীতিমালাটা কি শুধু সেন্টমার্টিনের জন্য কিনা, এ প্রশ্নে উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন বলেন, “না, দেশের যত পর্যটন স্থান রয়েছে ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট যত কর্মকাণ্ড আছে, সেক্ষেত্রে সবার জন্য আচরণবিধি আমরা তৈরি করেছি।

“আগে আমাদের নিজেদের পর্যটক নিয়ে চিন্তা করতে হবে। তাদের ভ্রমণ পারিবারিক, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আনন্দময় করাই আমাদের লক্ষ্য।”

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটি নীতিমালা প্রণয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি। সারাদেশের যত পর্যটন স্থান রয়েছে, পর্যটন সংশ্লিষ্ট যত কর্মকাণ্ড আছে; সেক্ষেত্রে সবার জন্য আমরা আচরণবিধি তৈরি করছি।’

বিদেশি পর্যটকদের হার বেড়েছে কি না?- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে আমাদের নিজস্ব পর্যটকদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমরা নিজেরা যারা পারিবারিক উদ্দেশ্যে যে ভ্রমণগুলো করি; সেগুলো নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আনন্দময় করার লক্ষ্য আমাদের। আমাদের নিজস্ব পর্যটকদের জন্য আমরা আরও কী ভালো ব্যবস্থা নিতে পারি। ভিসা জটিলতা আমাদের মনে হয় খুব একটা নেই। লজিস্টিক সমস্যা আছে। সামগ্রিকভাবে যখন আমাদের অবস্থার উন্নতি ঘটবে, আমরা মনে করি পর্যটন শিল্পের উন্নতি ঘটবে।’

এর আগে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মানতে হবে। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার নয় মাসের জন্য পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জানান, এর উদ্বোধনের কার্যক্রম পর্যালোচনায় রয়েছে। তবে কবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হবে, তার সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি। আন্তর্জাতিক মানের এই টার্মিনালের সার্বিক কাজ এখনো শেষ হয়নি এবং বিদেশি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানও এখনো প্রকল্পটি বুঝিয়ে দেয়নি বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *