■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে প্রায় ৩০ ঘণ্টা সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর সচল হয়েছে রেলপথ। আন্দোলনকারীরা রাত ৩টায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করলে ট্রেনের অচলাবস্থার অবসান ঘটে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাত আড়াইটার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা পেয়েছি। এরপর প্রস্তুতি নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করতে হয়েছে।
ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে জানিয়েছেন কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার কমলাপুর থেকে জয়দেবপুরগামী কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে জানান তিনি।
আনোয়ার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা রাত আড়াইটার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা পেয়েছি। এরপর প্রস্তুতি নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “প্রথমে জয়দেবপুর কমিউটার, এরপর রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে গেছে। সোয়া ৭টার কিছুক্ষণ পর কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে।”
জানা গেছে, সকাল ৬টা ১০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন, ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেন, ৭টা ৩৫ মিনিটে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন ও ৭টা ৫০ মিনিটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহী স্টেশন ছেড়ে গেছে।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাতে কর্মবিরতি শুরু করেন রানিং স্টাফরা। তাদের বুঝিয়ে কাজে ফেরাতে মঙ্গলবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক চলে। কিন্তু কোনো চেষ্টাই ফল দিচ্ছিল না।
গত মধ্যরাতে মিন্টো রোডে যোগাযোগ ও রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসায় বৈঠকের পর চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে ট্রেন চলাচল শুরুর ঘোষণা দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান।
মজিবুর রহমান রাত আড়াইটায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের সমস্যা বুধবারের মধ্যে সমাধান করবেন উপদেষ্টা মহোদয়। আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম।”
তিনি আরও বলেন, “মিডিয়ার মাধ্যমে কর্মী ভাইদের বলতে চাই আপনারা কাজে ফিরুন। উপদেষ্টা বলেছেন, আগের মতো আমরা যা পেয়ে আসছি, তা পাব।”
রেলওয়ে রানিং স্টাফ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী শাখার অতিরিক্ত সম্পাদক মো. হানিফ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই আমাদের ন্যায্য অধিকার মাইলেজ পুনর্বহাল হবে।’
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমি তাদের দাবি পূরণ করতে সক্ষম হব। বিদ্যমান সুবিধাদি বহাল থাকবে। আগে থেকে যেসব সুবিধা চলে আসছে তা পরিবর্তন হবে না।”
এদিকে, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় খুশি যাত্রীরা। সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী রমজান আলী জানান, মঙ্গলবার অনেকেই গন্তব্যে যেতে পারেননি। স্টেশনে এসে শুনেছি কেউ কেউ এখানেই রাত কাটিয়েছেন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় সকাল থেকে স্টেশনে যাত্রীদের সমাগম লক্ষ্য করা গেছে।
রাজশাহী স্টেশন মাস্টার শহিদুল আলম জানান, সকাল থেকে সব ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বনলতা ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি বিশ মিনিট বিলম্বে ছেড়েছে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, ‘আজ সকাল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় হলেও তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। এ অঞ্চলে ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। তাতে ময়মনসিংহ থেকে বিভিন্ন পথে প্রায় ৬ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে।’
গৌরীপুরের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘গৌরীপুরে যাওয়ার জন্য স্টেশনে এসে দেখি আজ ট্রেন চলছে। তাতে খুব ভালো লাগছে। যাতায়াতের নিরাপদ মাধ্যম ট্রেনকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা উচিত।’
ঢাকাগামী যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেন চলাচল শুরু হলেও শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন স্টেশনে আসছে ৩০-৪০ মিনিট দেরি করে। তার পরও স্বস্তির খবর, ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সেটা স্বাভাবিক থাকলে আমরা যাত্রীরা খুশি।’
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টা ৫ মিনিটে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস। এরপর ৬ টা ৫০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গিয়েছে মধুমতি এক্সপ্রেস এবং ৭টায় বনলতা এক্সপ্রেস।
যাত্রীদের ভাষ্য, মধ্যরাতে ধর্মঘট প্রত্যাহার হওয়ায় অনেক যাত্রী বিষয়টি জানেন না। সে কারণে সকালের দিকে ছেড়ে যাওয়ার ট্রেনগুলোতে অনেক আসন ফাঁকা ছিল। রেলের ধর্মঘট প্রত্যাহার হওয়ায় ভোগান্তি কমেছে।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল থেকেই যথা নিয়মের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচির কিছুটা হেরফের হলেও সকল ট্রেন যথা নিয়মে চলাচল করবে।
এদিকে, ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে রংপুর, বগুড়া, সিলেটসহ ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকেও। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে স্টেশনে আসতে শুরু করেছেন যাত্রীরা।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কমলাপুর স্টেশনের এক কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষতি
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ৩০ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কমলাপুর স্টেশনের এক কোটি ২০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন। এছাড়া কোচ ব্যালান্সের কারণে জয়ন্তিকা ও বুড়িমারি এক্সপ্রেস ট্রেনের আজকের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিজ কার্যালয়ে তিনি এসব তথ্য জানান।
স্টেশন ম্যানেজার বলেন, আমাদের স্টেশন থেকে সাধারণত প্রতিদিন এক কোটি ১৫ লাখ থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা আয় হয়। গতকাল বন্ধ থাকায় এই ক্ষতি হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, যে দুটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে সেগুলোর টাকা যাত্রীদের রিফান্ড করা হবে। যারা অনলাইনে কেটেছেন তাদের অনলাইনে ফেরত দেয়া হবে, যারা সরাসরি কাউন্টার থেকে কিনেছেন তাদের সরাসরি দেয়া হবে। এদিন পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে। অন্যান্য ট্রেনের এক থেকে দেড় ঘণ্টা শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে বলে জানান স্টেশন ম্যানেজার।