যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দোদুল্যমান রাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়া জয়ের পর তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।

এখন পর্যন্ত ২৬৭টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয়ের অনেকটা চলে গেছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ২১৪টি ইলেকটোরাল ভোট। যেসব অঙ্গরাজ্যে ফলাফল ঘোষণা বাকি আছে সেগুলোর বেশিরভাগেই এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প।

ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিতি পাওয়া অধিকাংশ সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্যে প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। 

এখন পর্যন্ত ট্রাম্প জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং পেনসিলভেইনিয়ায় এগিয়ে আছেন। এসব রাজ্যে বেশিরভাগ ভোট গণনা করা হয়ে গেছে। অ্যারিজোনা ও উইসকনসিনেও ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন। এ দুই রাজ্যে অর্ধেকের বেশি ভোট গণনা হয়েছে।

আর হ্যারিস এগিয়ে রয়েছেন শুধু মিশিগানে, সেখানে ৩২% ভোট গণনা হয়েছে। 

বুধবার (৬ নভেম্বর) সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, রিপাবলিকানসরা এখন পর্যন্ত সিনেটে ৫১টি আসনে জয়লাভ করেছে। অপরদিকে, ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ৪১টি আসন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানসরা আরও কিছু রাজ্যে জয়ের আশা করছে। ফলে সিনেটে তাদের আসন আরও বাড়তে পারে।

‘নীল দুর্গ’ ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রত্যাশিত জয় পেয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্যটি কয়েক দশক ধরেই ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

এনবিসি নিউজ বলেছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় জিতে কমলা এ অঙ্গরাজ্যের ৫৪টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভোট ব্যবধান কমালেন তিনি।

সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যালিফোর্নিয়ায় জিতেছিলেন। ভোট পেয়েছিলেন ৬৪ শতাংশ। সে সময় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি পেয়েছিলেন ৩৫ শতাংশ ভোট। গতকাল মঙ্গলবারের নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রমী হয়নি।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার সর্বশেষ পূর্বাভাসে ট্রাম্পের জয়ের কথা বলা হয়েছে। দোদুল্যমান রাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে ১০ শতাংশে নেমেছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান যাচাই করে নিউইয়র্ক টাইমস এ পূর্বাভাস তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা খুব দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে তার জয়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। অপরদিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জয়ের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে শেষ হচ্ছে। ট্রাম্প ৩০১টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এবং কমলা ২৩৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কয়েকটি রাজ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর ৬টায়। এরপর ধাপে ধাপে সব রাজ্যে শুরু হয়। দেশটিতে রাজ্যভেদে সময়ের ব্যবধান এবং একেক রাজ্যে একেক সময় ভোটগ্রহণ শুরুর সময় নির্ধারিত থাকায় শেষের সময়েও পার্থক্য হয়েছে। ঠিক এ কারণেই কিছু রাজ্যে ভোট গণনা দেরি হচ্ছে।

দেশটিতে মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। জিততে হলে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে।

নির্বাচনের জয়–পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে দোদুল্যমান ৭টি অঙ্গরাজ্য। সেগুলো কোনো দলের সুনির্দিষ্ট ঘাঁটি নয়। এসব অঙ্গরাজ্য হলো—নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, অ্যারিজোনা ও নেভাদা। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা এসব রাজ্যের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। বাকি রাজ্যগুলো রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক দলের ঘাঁটি। সেসবে ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট একটি দলই জিতে আসছে।

‘রেড বা লাল অঙ্গরাজ্য’ ও ‘ব্লু বা নীল অঙ্গরাজ্য’ শব্দগুলো মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোকে নির্দেশ করে। রেড অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটাররা প্রধানত একটি দল-রিপাবলিকান পার্টিকে ভোট দেন। আর ব্লু অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটাররা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট দেন। এ ছাড়া যেসব অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে ভোটার সমর্থন ওঠানামা করে সেগুলো ‘সুইং স্টেট (দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য) বা ‘বেগুনি অঙ্গরাজ্য’ বলা হয়।

এদিকে নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিছু রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে স্নাইপার ইউনিট। রয়েছে কয়েক স্তরের গোয়েন্দা সতর্কতা। ভোট শেষেও বেশ কয়েক দিন এ ধরনের নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে। টাইম জোনের তারতম্যের কারণে রাজ্যগুলোতে ভোটগ্রহণ ও গণনা সম্পন্ন হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। প্রথম অঙ্গরাজ্য হিসেবে ভোটগ্রহণ শেষ হয় ইন্ডিয়ানা ও কেন্টাকিতে।

এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ক্যালিফোর্নিয়ায় ট্রাম্পকে হারান। ওই নির্বাচনে হিলারি পান ৬২ শতাংশ ও ট্রাম্প ৩৩ শতাংশ ভোট।

ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট, সেটি ক্যালিফোর্নিয়া।

তবে ক্যালিফোর্নিয়ায় জিততে চললেও এখন পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফলাফলে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে আছেন কমলা।

বার্তা সংস্থা এপি জানায়, প্রাথমিক ফলাফলে সিনেটের ৫১টি আসন রিপাবলিকানদের দখলে রয়েছে, যা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যথেষ্ট। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা এখন আর সম্ভব নয়।

দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে। তাই পপুলার ভোট বেশি পেয়েও ইলেকটোরাল ভোট কম পাওয়ায় ফলাফল বিপরীতে আসার ঘটনাও ঘটে।

তবে পপুলার ভোট দেশের জনমত বুঝতে সাহায্য করে। সর্বশেষ অবস্থা অনুযায়ী মনে হচ্ছে, ট্রাম্পেই ভরসা রাখছেন দেশটির বেশিরভাগ জনগণ।  

সর্বশেষ প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান যাচাই করে নিউইয়র্ক টাইমসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা খুব দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে তার জয়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। অপরদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জয়ের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে শেষ হচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের পূর্বাভাস আরও বলছে, ট্রাম্প ৩০১টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এবং কমলা ২৩৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে পারেন।

এদিকে সিএনএনের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার পর্যন্ত রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪৬ ইলেকটোরাল ভোট। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ১৮৭ ভোট।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে। টাইম জোনের তারতম্যের কারণে রাজ‍্যগুলোতে ভোটগ্রহণ ও গণনা সম্পন্ন হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। প্রথম অঙ্গরাজ্য হিসেবে ভোটগ্রহণ শেষ হয় ইন্ডিয়ানা ও কেন্টাকিতে।

৫৪ ইলেক্টোরাল ভোটের ক্যালিফোর্নিয়ায় কমলা হ্যারিসের জয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক স্টেট ক্যালিফোর্নিয়াতেই ৫৪ ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। চিরাচরিতভাবে এই রাজ্যটি ডেমোক্র্যাটদের দুর্গ। ২০২০ সালে এই রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়েছিলেন জো বাইডেন। এবার এই রাজ্যে আবারও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর কাছে হারলেন ট্রাম্প। এই রাজ্যে কমলার বিজয় প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে তার পথকে শক্তিশালী করবে। 

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমলা হ্যারিস শহরাঞ্চলে বিশেষ করে লস এঞ্জেলেস এবং সান ফ্রান্সিসকোতে ভালো করেছেন, যেখানে তিনি তরুণ ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে জোরালো সমর্থন পেয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ফলাফল একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়, কারণ এটি হ্যারিসকে নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোটে অর্জনে অনেক বেশি সহায়তা করবে।

এদিকে মার্কিন নির্বাচনের ফল নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো। এই সুইং স্টেটগুলোতে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ৯৩টি। যেখানে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে উত্তর ক্যারোলিনায়। আর এই রাজ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। এখানে রয়েছে ১৬ ইলেক্টোরাল ভোট। উত্তর ক্যারোলিনায় ট্রাম্পের জয় ২০২০ সালের নির্বাচনে তার সাফল্যের প্রতিফলন। রাজ্যের শহুরে-গ্রামীণ এলাকায় এবং রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে দৃঢ় সমর্থন পেয়েছেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *