■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নির্ধারিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মোট শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ। এর ফলে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম, এই ট্যারিফ হার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। তবে এখনো আমরা আশাবাদী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনেছি, বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে। ১ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’
তবে শুল্কহার ১০ শতাংশের বেশি না হওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কিন্তু যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কই বহাল থাকে, তাহলে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানিতে মোট শুল্ক দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশ। কারণ, পাল্টা শুল্ক আরোপের আগে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করত। নতুন প্রস্তাবে খাতভিত্তিক বিদ্যমান হার ছাড়াও অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যদি ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়, তবে শুধু শুল্ক বাবদই ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ডলারের বেশি। এত উচ্চ হারে শুল্ক দিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
মাহমুদ হাসান বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্কের অর্ধেকও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেবে না। কারণ, তারা বিকল্প হিসেবে ভিয়েতনাম বা ভারতের মতো দেশ থেকে তুলনামূলক কম খরচে পণ্য সংগ্রহ করতে পারে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে ২০ শতাংশ শুল্কে পণ্য আমদানির চুক্তি হয়েছে, যা আমাদের জন্য আরও উদ্বেগের।’
৩৫ শতাংশ শুল্কহার বহাল থাকলে একদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যয় বেড়ে যাবে, অন্যদিকে বাজারের হিস্যা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের মোট তৈরি পোশাকের ২০ শতাংশ রপ্তানি হয়, কিন্তু একই বাজারে ভিয়েতনামের অবস্থান আরও শক্ত। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের পণ্যের দাম কমাতে হবে, যা সরাসরি উৎপাদন খরচের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
‘এর ফলে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে। অনেকে টিকে থাকতে না পেরে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এমনিতে আমরা নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখন এই বাড়তি শুল্ক আরোপ বাস্তবায়িত হলে ক্ষতির মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে।
‘আমরা এই ক্ষতির প্রভাব ও মাত্রা বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি। আশা করি, সরকার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখবে এবং কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।’
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ায় ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে শুল্ক হার কমতে পারে, অন্যথায় ঘোষিত হার কার্যকর হবে।
তিন মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এবার নতুনভাবে আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক পূর্বের শুল্ক হার ছাড়াও প্রযোজ্য হবে।
৭ এপ্রিল জারি করা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, নতুন এই হার আগের শুল্কের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, আগে বাংলাদেশি পণ্য যেই শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করত, তার সঙ্গে ৩৫ শতাংশ যোগ হবে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ এখন কেবল আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। এজন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অধীন অটেক্সা (অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ২২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকার সমান। এ সময়ের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৬৪ শতাংশ বেশি। মার্কিন বাজারে শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই ছিল সবচেয়ে বেশি।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, নতুন শুল্ক যদি বহাল থাকে, তাহলে অনেক বাংলাদেশি পোশাক কোম্পানিকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হতে পারে। কিছু পণ্যে এ হার ৬০ শতাংশও ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। শুল্ক কার্যকর হলে অনেক মানুষ চাকরি হারাতে পারেন, শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রুবেল মনে করেন, এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বাড়াতে হবে, উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে হবে এবং বোঝাতে হবে—বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের গুরুত্ব কতটা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮.৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং সেখান থেকে ২.২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। এ ছাড়া মাথার টুপি বা ক্যাপ, চামড়ার জুতা, হোম টেক্সটাইল, পরচুলা এবং অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য বেশি রপ্তানি হয়।
গত এপ্রিলে ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। দর-কষাকষির পর এখন সেটি কমে ২০ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এ ছাড়া মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এই শুল্ক সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে, তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে পণ্য রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়বে, সেটি জানতে চাইলে চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, রপ্তানিতে ধস নামবে। তার কারণ, এই পরিমাণ শুল্ক দিয়ে অনেক মার্কিন ক্রেতাই পোশাক কিনতে আগ্রহী হবেন না। শুধু তা–ই নয়, এই পাল্টা শুল্কের প্রভাবে ইইউর বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, তখন অনেকেই ইইউর ক্রয়াদেশ নিতে চাইবে। ফলে পোশাকের দাম কমানোর সুযোগ নিতে পারেন ইইউর ক্রেতারা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই হিসাবের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁদের ধারণা, প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্প সম্ভবত চীনকে চাপে ফেলতে চাচ্ছেন। আর সে জন্য তিনি এমন দেশগুলোকে টার্গেট করছেন, যেগুলো চীনের বড় বিনিয়োগ পায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ, যারা ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৭ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রেখেছে, এসব দেশ পোশাক, ফুটওয়্যার ও অন্যান্য পণ্যের প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র। ফলে এই শুল্ক আরোপে তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্যও এসব পণ্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্ববাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও বড় পতন দেখা দিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ নামক বড় শেয়ার সূচক ০ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে, যা গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। আমেরিকায় লিস্টেড জাপানি গাড়ি কোম্পানি টয়োটার শেয়ার দাম ৪ শতাংশ এবং হোন্ডার শেয়ার দাম ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে।
অপরদিকে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে মার্কিন ডলারের মূল্য যত কমেছে, তা গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন।
৩৫ শতাংশ শুল্কের কথা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে চিঠিতে যা লিখলেন ট্রাম্প
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের অন্যতম বাজার যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিলে এ দেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন আগ্রাসী এই শুল্ক হার কার্যকর করার আগে সময় দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর বাড়তি এই শুল্ক কার্যকরের আগে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়ে দেশটির সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের ওই তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে গতকাল সোমবার তা আরও বাড়িয়ে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি। একই সঙ্গে ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানদের কাছে এদিন একটি করে চিঠিও তিনি পাঠিয়েছেন। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি নিরসনের বিষয়ে সমাধান না এলে ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বর্ধিত হারে শুল্ক দিতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর একটি চিঠি তিনি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে। চিঠিগুলো নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা ট্রাম্পের চিঠি হুবহু বাংলা অনুবাদ আমাদের পাঠকদের প্রকাশ করা হলো—
দ্য হোয়াইট হাউস
ওয়াশিংটন
জুলাই ৭, ২০২৫
মাননীয়
মুহাম্মদ ইউনূস
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা
প্রিয় জনাব ইউনূস,
আপনাকে এই চিঠি পাঠানো আমার জন্য অনেক সম্মানের, যাতে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দৃঢ়তা ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে, যদিও আপনার মহান দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে। তথাপি, আমরা আপনার সঙ্গে সামনে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে তা হবে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে। সে কারণে আমরা আপনাকে বিশ্বের ১ নম্বর বাজার যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে অনেক বছর আলোচনা করেছি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক, নীতিসমূহ এবং বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী বাণিজ্যঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে আমাদের অবশ্যই সরে আসতে হবে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের সম্পর্ক একে অপরের সমকক্ষ থেকে অনেক দূরে। ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের যেকোনো ও সব ধরনের পণ্যের ওপর আমরা মাত্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব। এই শুল্ক সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে। উচ্চ শুল্ক এড়ানোর উদ্দেশ্যে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে সেগুলোর ওপরও সেই উচ্চ শুল্ক আরোপ হবে। অনুগ্রহ করে এটা অনুধাবন করেন যে ৩৫ শতাংশ সংখ্যাটি আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্যঘাটতি বৈষম্য রয়েছে, তা দূর করার জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম। আপনি অবগত যে যদি বাংলাদেশ বা আপনার দেশের বিভিন্ন কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন বা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। বস্তুত আমরা সম্ভাব্য সব কিছু করব যাতে দ্রুত, পেশাদারত্বের সঙ্গে ও নিয়মিতভাবে অনুমোদন পাওয়া যায়, অন্যভাবে বললে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে। অনুগ্রহ করে এটা উপলব্ধি করুন যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি, যেটা স্থায়ী হওয়ার নয়, সেটা তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের অনেক বছরের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিসমূহ এবং বাণিজ্য বাধা সংশোধন করার লক্ষ্যে এসব শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং সত্যিকার অর্থে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি!
আপনার বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আমরা আগামী বছরগুলোতে আপনার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন, তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি। এই শুল্কহার আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। আপনি কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হতাশ হবেন না।
এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভ কামনাসহ, আমি
বিনীত,
ডোনাল্ড জে ট্রাম্প