■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তার সামনে রয়েছে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্পের সামনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো- ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঋণ, মুদ্রাস্ফীতির চাপ, মধ্যপ্রাচ্যে সংকট, কর হ্রাস ও জ্বালানি সম্প্রসারণ।
ট্রাম্পের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ
জাতীয় ঋণ কমানো
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্পের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ কমানো। মার্কিন সরকার ইতোমধ্যে ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার সরকারি ঋণে জর্জরিত। ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী দশকে এই ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। অনেক মার্কিনি মনে করেন, বাইডেন প্রশাসনের ভুল অর্থনীতির কারণে এমনটি হয়েছে। আর এ কারণেই এবার কমলা হ্যারিস পরাজিত হয়েছেন। সুতরাং সুনাম কুড়াতে হলে ট্রাম্পকে এ খাতে ভালো করতে হবে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ। যা বর্তমানে ২ দশমিক ৪ এ গিয়ে ঠেকেছে। এটি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা এখন ট্রাম্পের দায়িত্ব। ট্যাক্স কমানো এবং শুল্ক বাড়ানোসহ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিগুলো হয়তো মুদ্রাস্ফীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। তবে এ কাজ সহজ হবে না ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য। করোনা মহামারীর কারণে মার্কিন অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছে যা এখনো কেটে ওঠেনি। সেই হাল এবার ধরছেন ট্রাম্প।
মধ্যপ্রাচ্য সংকট
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বড় মিত্র ইসরাইল। এর ফলে বিশ্বব্যাপী একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ কারণে অনেক বিশ্লেষক ডেমোক্র্যাট পার্টিকে ‘যুদ্ধবাজ’ আখ্যায়িত করেছেন। এ সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে হবে ট্রাম্পকে।
জ্বালানি সম্প্রসারণ
নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন যে, ভোটে জিতলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি ও শক্তি উৎপাদনকে আরও সম্প্রসারিত করবেন। একইসঙ্গে, জ্বালানি খরচ যেন কম আসে, সেজন্য আর্কটিক মরুভূমির মতো এলাকাগুলোতে নতুন তেলকূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান ট্রাম্প। দেশটির অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে এটিও বড় চ্যালেঞ্জ।
কর হ্রাস
ট্রাম্প বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর কমানোর প্রস্তাব করেছেন, সংখ্যার হিসেবে যা প্রায় ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের। প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে ২০১৭ সালেও তিনি একই ধরনের একটি করনীতি গ্রহণ করেছিলেন, যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদশালীদেরই বেশি সুবিধা দিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে যে, এবারও হয়তো সেরকমই কিছু ঘটবে। ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কহার বৃদ্ধি করবেন।
ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি
বিজয় ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার শাসনের মূলমন্ত্র হবে: প্রতিশ্রুতি দেয়া, প্রতিশ্রুতি পালন করা। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখবো।’
১) অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার
প্রচারণায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতো ব্যাপকভাবে অভিবাসীদের বহিষ্কারে আইনি ও পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
২) অর্থনীতি, কর ও শুল্ক নীতি
ট্রাম্প মুদ্রাস্ফীতি কমানো ও কর সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি টিপস আয়ের ওপর কর মওকুফ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর বাতিলের পরিকল্পনা করেছেন। এছাড়া, অধিকাংশ বিদেশি পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ এবং চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৬০% শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন, যা কিছু বিশ্লেষকের মতে ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে পারে।
৩) জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা
ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারির ক্যাপিটল দাঙ্গায় দোষী সাব্যস্তদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার মতে, এদের অনেকেই “রাজনৈতিক বন্দি” এবং তাদের মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তিনি তার সমর্থকদের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
৪) বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত
ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে দ্রুততার সঙ্গে বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত করার কথা বলেছেন, যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন। ট্রাম্প এ তদন্তগুলোকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
৫) ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান
ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য মার্কিন অর্থ ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন এবং ক্ষমতায় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও তিনি কীভাবে এই সমঝোতা অর্জন করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
৬) গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা নয়
ট্রাম্প জাতীয় পর্যায়ে গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞা আরোপে আগ্রহী নন, বরং প্রতিটি রাজ্য যেন তাদের নিজস্ব আইন তৈরি করতে পারে, সেই নীতিকে সমর্থন করেছেন।
৭) জলবায়ু সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কমানো
ট্রাম্প পরিবেশগত বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিকল্পনা করেছেন এবং পুনরায় তেল ও গ্যাস খননের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খরচ কমানো সম্ভব হবে, যদিও বিশ্লেষকরা এতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্পের এই প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, কারণ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিশ্রুতির বিস্তারিত নেই এবং কিছু প্রতিশ্রুতি আইনি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।