ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য ও বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে তিনি পদত্যাগ করলেন।

তিনি তার খালা শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে টিউলিপের ভোগ-দখলে থাকা দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করানোসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে।

লন্ডনে হাসিনা ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে উপহার নেওয়া ছাড়াও; সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট নিয়েছিলেন টিউলিপ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এসবের মধ্যে দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল। তারা বলছিল, টিউলিপের ওপর ব্রিটেনের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারই নাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। এতে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের নৈতিকতা হারিয়েছেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি।

তিনি মন্ত্রী থাকলে সরকার তার কাজে মনযোগ দিতে পারবে না এমন কথা উল্লেখ করে টিউলিপ বলেছেন, “এ কারণে আমি আমার মন্ত্রির পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, পেনশনমন্ত্রী এমা রেনল্ডস টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা সরকার আমলে বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম আসে। ওই অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের এই তৎপরতা আলোচনায় আসার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি খবর প্রকাশ হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সময় টিউলিপ সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর ওই ছবি এ সময় ফলাও করে প্রচার করে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম।

টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর, সম্পাদকীয় প্রকাশিত হতে থাকে।

এর মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সম্পত্তি টিউলিপের ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এই প্রেক্ষাপটে টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লিখেছিলেন। মন্ত্রীদের আচার-আচরণ, নীতিনৈতিকতা বিষয়ে ম্যাগনাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে থাকেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *