■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামিসহ দুজনকে সাত ও পাঁচ দিনের করে রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের পৃথক এই রিমান্ডের আদেশ দেন।
আসামিরা হলে—চন্দন দাস (৩৫) ও রিপন দাস (২৭)। এদের মধ্যে চন্দন আলিফ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি। অন্যদিকে নগরের চকবাজারে একটি ফার্মেসি দোকানের কর্মচারি রিপন এই মামলার তদন্তেপ্রাপ্ত আসামি।
চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সাইফুল হত্যা মামলার দুই আসামিকে আজ শুক্রবার আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাঁদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে আসামি চন্দনকে সাতদিনের এবং রিপনকে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত বুধবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় ভৈরব রেলস্টেশন থেকে চন্দনকে এবং পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা থেকে রিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ বলেছে, ঘটনার দিন হেলমেট পরে চন্দন কিরিচ দিয়ে আইনজীবী আলিফকে কোপান। অন্যদিকে রিপন দাস হাতে বটি নিয়ে তাড়া করছিল। তিনিও হেলমেট পরেছিলেন।
এর আগে অভিযুক্ত দুই আসামিকে আদালতে তোলার সময় আদালত এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করে। আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের পর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
গত ২৫ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হলে তার অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে।
আইনজীবী আলিফ হত্যার ভাইরাল সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত চন্দন দাস ছুরি হাতে সাইফুলকে কোপ দিচ্ছিলেন। এ সময় চন্দনের মাথায় হেলমেট পরিহিত ছিল।
এরপর ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর (মামলা রেকর্ডের তারিখ ৩০ নভেম্বর) আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করে নিহতের বাবা। একই সময় আদালতে আইনজীবীদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও বিস্ফোরক আইনে ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৪০০–৫০০শ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা করেন আলিফের বড়ভাই খানে আলম।
সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর ঘটনার দিন আহত এক ব্যবসায়ী কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৯ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা ৪০–৫০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় আরও একটি মামলা করেন। পুলিশ জানায়, আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় এই পর্যন্ত ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে।
আইনজীবী সাইফুলের মেয়ে তাসকিয়ার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিল বিএনপি
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের তিন বছরের মেয়ে তাসকিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতা মীর হেলাল উদ্দিন জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাসকিয়ার পড়ালেখা থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত আর্থিক খরচের দায়িত্ব বিএনপি নিয়েছে। একই সঙ্গে আলিফের বাবা জামাল উদ্দিনের ইচ্ছাপূরণে আলিফের নামে একটি মাদ্রাসাও গড়ে তোলার আশ্বাসও দেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর সার্সন রোডের বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের বাসায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে আলিফের বাবা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর নাতনি তাসকিয়া উপস্থিত ছিল। এ সময় জামাল উদ্দিনের হাতে আর্থিক অনুদানও তুলে দেন মীর হেলাল উদ্দিন।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মীর হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমরা আলিফের তিন বছরের মেয়ে তাসকিয়ার বিয়ে পর্যন্ত যাবতীয় দায়িত্ব নিচ্ছি।’
একই সঙ্গে আলিফের বাবা জামাল উদ্দিনের ইচ্ছা অনুযায়ী আলিফের নামে এলাকায় একটি মাদ্রাসা গড়ে দেওয়ার দায়িত্বও বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে নেওয়ার কথা জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে যারা নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে তারাই আলিফকে খুন করেছে।
এ বিষয়ে আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের উচিত বিচার ও ফাঁসি চাই। আর আমার ছেলের নামে একটি মাদ্রাসা করতে চাই। লোহাগাড়া চুনতিহাট ৯ নম্বর ওয়ার্ড আবদুল লতিফ শাহ মাজার এলাকায় এ মাদ্রাসা গড়ে তোলার ইচ্ছার আছে।’ ওই স্থানে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষার্থীর একটি হিফজখানা তিনি পরিচালনা করেন বলেও উল্লেখ করেন।