ডিএনএ টেস্টে ৫ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত, আরও ২ শিশুর মৃত্যু

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুইজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জাতীয় বার্ন ও ঢাকা মেডিকেল বার্ন মিলে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছাঃ মাহিয়ার। এর আগে দুপুরের দিকে ৮৫ শতাংশ পোড়া ক্ষত নিয়ে চিকিৎসাধীন মাহতাব রহমান মারা যান। সে মাইলস্টোনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মাহতাবের বাবা মিজানুর রহমান ভূঁইয়াও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মাহতাব তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। তাদের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ১১ নম্বর রাজামেহার ইউনিয়নে।

তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান।

গত সোমবার দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান উত্তরায় মাইলস্টোনের ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩০ জন। আর হতাহতদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।

৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই)  বিকেলে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন খান।

তিনি বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গত দুই দিনে বিকৃত হয়ে যাওয়া পাঁচ মরদেহ বা দেহাবশেষ থেকে ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক বিভাগ। কিছুক্ষণ আগে ৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’

সিআইডি জানিয়েছে, সিআইডির ডিএনএ ল্যাবের সদস্যরা ঢাকা সিএমএইচে রক্ষিত অশনাক্ত মরদেহ বা দেহাবশেষ থেকে মোট ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। এই নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করে ৫ জন নারীর ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। পরে ৫টি পরিবারের মোট ১১ জন সদস্যের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে ৫টি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই পাঁচজনের সবাই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী। 

তাদের মধ্যে রয়েছে- ওকিয়া ফেরদৌস নিধি। সে ছিল মাইলস্টোন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা মো. ফারুক হোসেন ও মা সালমা আক্তার। মো. শাহাবুল শেখ ও মিম দম্পতির কন্যাসন্তান তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসা মনি, মো. বাবুল ও মাজেদা দম্পতির সন্তান লামিয়া আক্তার সোনিয়া, মো. আব্বাস উদ্দিন ও মিনু আক্তারের আফসানা আক্তার প্রিয়া, আব্দুল কাদির ও উম্মে তামিমা আক্তার দম্পতির কন্যাসন্তান মারিয়াম উম্মে আফিয়ার মরদেহ শনাক্ত করেছে সিআইডি।

এর আগে, এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের মালিবাগে সিআইডি ভবনে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। গতকাল বুধবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ অনুরোধ জানানো হয়।

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তদের ঘটনায় নিহত ৩০ জনের পরিচয়

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত নিহতদের সংখ্যা ও নামের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

পোস্টে উল্লেখ করা রয়েছে, আজ বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে।

মৃতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৩ জন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১ জন এবং লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১ জন এবং গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন আছেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটে নিহতরা হলেন—তানভীর (১৪), আফনান ফাইয়াজ (১৪), মাহেরিন চৌধুরী (৪৬), বাপ্পি (৯), মাসুকা (৩৭), এবি শামীম (১৪), সায়ান ইউসূফ (১৪), আরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩), নাফি (১৯), মাহাতাব উদ্দিন ভুইয়া (১৩), মাহিয়া তাসনিম (১৫)।

সিএমএইচে নিহতরা হলেন—রজনী ইসলাম (৩৭), মো. সামিউল করিম (৯), ফাতেমা আক্তার (৯), মেহনাজ আফারিন হুমায়রা (৯), সারিয়া আক্তার (১৩), নুসরাত জাহান আনিকা (১০), সাদ সালাউদ্দিন (৯), সায়মা আক্তার (৯), ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম।

এই হাসপাতালে আরও ৬ জনের লাশ অশনাক্ত হিসেবে মর্গে ছিল। তাদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে সিআইডি। আজ বিকেলে সিআইডি তাদের পরিচয় শনাক্ত করে। ওই ৫ শিক্ষার্থী হলো—ওকিয়া ফেরদৌস নিধি, লামিয়া আক্তার সোনিয়া, আফসানা আক্তার প্রিয়া, রাইসা মনি, মারিয়াম উম্মে আফিয়া।

ঢামেকে জুনায়েদ (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকায় এই ব্যক্তির মৃত্যুর হিসাব পাওয়া গেলেও সিআইডির কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সিআইডি বলছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১ জনের (সিএমএইচের মর্গে থাকা লাশ) পরিচয় শনাক্ত হয়নি।

আর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ওমায়ের নূর আশফিক নামে ১১ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *