ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গাজায় মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গ্রীষ্মকালীন ছুটি সংক্ষিপ্ত করে ডাকা মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “স্টারমার মন্ত্রিসভাকে জানিয়েছেন, গাজায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি নিরসনে ইসরায়েল যদি বাস্তবধর্মী কোনো পদক্ষেপ না নেয়, যুদ্ধবিরতিতে না পৌঁছায়, পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে না আসে এবং টেকসই শান্তিপ্রক্রিয়ায় অঙ্গীকার না জানায়—তবে সেপ্টেম্বরেই, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের আগেই, যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী আবারও স্পষ্ট করেছেন—ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কোনো সমতা নেই। হামাসকে অবশ্যই সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে, গাজার সরকারে কোনো ভূমিকা না রাখার কথা মেনে নিতে হবে এবং নিরস্ত্র হতে হবে।”

স্টারমার ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এই প্রক্রিয়ায় গাজায় আরও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বিবৃতিতে স্টারমার আরও বলেন, “গাজার পরবর্তী ধাপে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এতে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করা হবে।”

স্টারমার বলেন, “ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয়, জাতিসংঘকে গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠাতে না দেয়, পশ্চিম তীর দখল না-করার নিশ্চয়তা না দেয় এবং টেকসই শান্তিপ্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত না হয়—তবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া অনিবার্য হয়ে উঠবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বহু আগে থেকেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছি। ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এটি একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার। এটি কোনো প্রতিবেশী দেশের ‘অনুগ্রহে’ পাওয়ার বিষয় নয়, বরং ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” 

এ ইস্যুটি আরও জোরালো হয় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গত সপ্তাহে যখন জানান, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় ইসরায়েল যে অঞ্চলগুলো দখল করেছে, সেগুলোকে ভিত্তি ধরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স।

তবে ইসরায়েল ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, এটি হামাসের মতো গোষ্ঠীর জন্য একটি ‘পুরস্কার’ হিসেবে দেখা হবে, যারা গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে বর্তমান যুদ্ধের সূচনা করে।

উল্লেখ্য, গত বছর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় স্টারমার বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর অবস্থান ধীরে ধীরে আরও কড়া হয়েছে।

স্টারমারের সরকার ইতিমধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে করা আগের সরকারের আপত্তি প্রত্যাহার করেছে এবং ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র রপ্তানিও স্থগিত করেছে। এ ছাড়া গত মাসে ব্রিটেন ইসরায়েলের দুজন কট্টর-ডানপন্থী মন্ত্রী— ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বারবার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *