৬ বছর পর ফের শাটডাউনে মার্কিন সরকার

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■ 

বাজেট নিয়ে অচলাবস্থার জেরে ছয় বছরেরও বেশি সময় পর ফের শাটডাউন শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা অস্থায়ী ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারে অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারকে সচল রাখতে স্থানীয় সময় রাত ১২টার মধ্যে ব্যয়সংক্রান্ত বিল পাস করা লাগত। কিন্তু সেই বিল পাস হয়নি।

এতে বহু সরকারি কর্মী বেতন ছাড়াই ছুটিতে যাবেন এবং সব না হলেও অনেক সেবা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাবে।

ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা ১ মিনিট) থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে সরকার শাটডাউন। সিনেটে শেষ মুহূর্তের অর্থায়ন বিল পাস না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো। এতে বহু সরকারি কর্মচারীকে বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠানো হতে পারে এবং বহু সরকারি কর্মসূচি ও সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।

এছাড়া ২০১৮-১৯ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে এটিই প্রথম সরকার শাটডাউন। তবে জরুরি পরিষেবা চালু থাকলেও জরুরি নয় এমন বিভাগ ও কর্মীরা এর বাইরে থাকবে। শনিবার রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ব্যয়বাজেট প্রস্তাব গৃহীত না হওয়ায় দেশজুড়ে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

ইতিহাসে ১৯৮০ সালের পর থেকে এক ডজনেরও বেশিবার মার্কিন সরকার আংশিকভাবে শাটডাউন হয়েছে। তবে এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, এই সুযোগে তিনি সরকারি রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে আনতে চান। এতে অতীতের তুলনায় দীর্ঘ অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, এই শাটডাউনের সুযোগে তিনি এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য ‘খারাপ’ হবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা এমন কিছু করতে পারি যা তাদের পছন্দের মানুষকে বাদ দেবে, তাদের পছন্দের কর্মসূচি বাতিল করবে। এগুলো তাদের জন্য খারাপ ও অপূরণীয় হবে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হলে অনেক ভালো দিকও আসতে পারে।

এর আগে প্রতিবারই শাটডাউনের সময় শত শত সরকারি কর্মী সাময়িক ছুটিতে গিয়েছিলেন এবং পরে কাজে যোগ দিয়ে বকেয়া বেতন পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ সুযোগে তিনি ‘অনেককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত’ করবেন। তাঁর দাবি, ‘ওরা সবাই ডেমোক্র্যাট।’

জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে হোয়াইট হাউসের নৈতিকতা বিষয়ক প্রধান আইনজীবী ছিলেন রিচার্ড পেইন্টার। তিনি ট্রাম্পের এ হুমকিকে ‘বলপ্রয়োগের কৌশল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প কর্মীদের ছাঁটাইয়ের হুমকি দিচ্ছেন। এর কিছু হয়তো তিনি করতে পারবেন, কিন্তু অনেক কিছুই কংগ্রেস অনুমোদন দেয়নি। বিশেষ করে যাদের সিভিল সার্ভিস সুরক্ষা আছে, তাদের চাকরি থেকে সরানো যাবে না।’

কোনও কারণে কংগ্রেস যদি ব্যয় বিল পাস করতে ব্যর্থ হয় বা প্রেসিডেন্ট সেই বিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন, তখনই ঘটে ‘শাটডাউন’। এ অবস্থায় বেশিরভাগ ফেডারেল সংস্থা খরচ চালাতে পারে না এবং অপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম থেমে যায়।

তবে জাতীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত সুরক্ষা কিংবা আকাশপথ নিয়ন্ত্রণের মতো জরুরি কার্যক্রম চালু থাকে।

এমন অচলাবস্থার পেছনের মূল কারণ সাধারণত দলীয় দ্বন্দ্বই। ২০১৮–১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের দীর্ঘতম ৩৫ দিনের শাটডাউনের মুখে পড়েছিল। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দে জোর দিচ্ছিলেন।

সেসময় এর প্রভাব পড়েছিল লাখো সরকারি কর্মীর ওপর। এসব কর্মীর অনেকে বেতন ছাড়াই সেসময় কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, আবার অনেকে সাময়িক ছুটিতেও চলে গিয়েছিলেন। সরকারি সেবার সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার ও ব্যবসাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এছাড়া পাসপোর্ট, ঋণ, অনুদান কিংবা জাতীয় উদ্যান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় সাধারণ মানুষও ভোগান্তিতে পড়েন।

অচলাবস্থা এড়াতে মঙ্গলবার শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকানরা আরেকটি বিল আনেন। এতে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যয় চালিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব ছিল। ভোটে ৫৫-৪৫ সমর্থন পেলেও পাস হতে প্রয়োজন ছিল ৬০ ভোট। ভোটাভুটিতে দুই ডেমোক্র্যাট-পেনসিলভানিয়ার জন ফেটারম্যান ও নেভাদার ক্যাথরিন কর্তেস মাস্তো এবং মেইনের স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দেন।

অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের বিল নামিয়ে দেন। সেই বিলে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত অর্থায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ছিল। ভোটে ৪৭-৫৩ ব্যবধানে বিলটি ব্যর্থ হয়। কোনো রিপাবলিকান এতে সমর্থন দেননি।

ভোটাভুটি ব্যর্থ হওয়ার পর দুই দলই একে অপরকে দায়ী করে। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, ‘রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্যসেবার সংকট সমাধান না করে সরকার শাটডাউন করে দিচ্ছে।’

প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফরিস অভিযোগ করেন, রিপাবলিকানরা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করার জন্য ভোট দিয়েছে।

অন্যদিকে সিনেটের রিপাবলিকান নেতা জন থুন আশা প্রকাশ করেছেন, বুধবারের পরবর্তী ভোটে কিছু ডেমোক্র্যাট তাঁদের দলের ‘ক্লিন বিল’-এর পক্ষে ভোট দেবেন। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘এ সবই অপ্রয়োজনীয় ছিল। কেবল তাঁদের বামঘেঁষা রাজনৈতিক অবস্থানে অনড় থাকার কারণেই এ কাজ করা হয়েছে।’

দ্বিদলীয় নীতি কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, এবারসহ ১৯৮০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ বার সরকার অচল হলো। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থা হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে-২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত টানা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *