বাংলাদেশকে ২০০ মি‌লিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার খাতে বাড়তি ২০০ মিলিয়ন ডলারের (২ হাজার ৩শ ৯০ কোটি টাকা) সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তির আওতায় এই অর্থ দেয়ার কথা জানান ইউএসএআইডির ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে। আমরা সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এর আওতায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেয়া হবে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা এখন চুক্তি অনুযায়ী কাজ করবো। এ চুক্তি মূলত সরকারের অগ্রাধিকারমূলক কাজগুলো এগিয়ে নেয়ার জন্য।

ইউএসএআইডির উপ-সহকারী ব‌লেন, এই চুক্তিটি বাংলাদেশের জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধির জন্য ভূমিকা রাখবে, বি‌শেষ ক‌রে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করার ক্ষে‌ত্রে। আমরা স্বাস্থ্য, শাসন ব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তরুণদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে তারা যাতে দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে সেদিকে নজর দিচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণ এখানে মূল অগ্রাধিকার। 

তি‌নি ব‌লেন, এটি কোনও এমেন্ডমেন্ট নয়, এটি নতুন চুক্তি। এটি নতুন অর্থায়ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য।

তিনি আরও ব‌লেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আমরা সামনে একসঙ্গে আরও কাজ করার প্রত্যাশা করছি।

বৈঠকের পর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আজ মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমাদের মূল আলোচনা ছিল তাদের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসএআইডির সঙ্গে। বিশেষ করে আর্থিক সংস্কার, আর্থিক খাতে যে সহযোগিতা দরকার সেটা। দ্বিতীয়ত বাণিজ্য, আমরা এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন এবং বাণিজ্যে বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা বা বাজার এক্সপ্লোর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোবো। তারা সে ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগে যে চুক্তি আগে হয়েছিল সেটার সঙ্গে আরো ২০০ মিলিয়ন যোগ করা হয়েছে। আগের অর্থের সঙ্গে এটি যুক্ত হয়েছে। তার মানে আরো বাড়তি টাকা তারা দেবে।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরা‌নোর বিষ‌য়ে ঢাকা সফররত মা‌র্কিন প্রতি‌নি‌ধিদ‌লের স‌ঙ্গে আলোচনা ক‌রে‌ছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, আমরা আজকে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমাদের মূল আলোচনা ছিল তাদের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসএআইডির সঙ্গে। বিশেষ করে আর্থিক সংস্কার, আর্থিক খাতে যে সহযোগিতা দরকার সেটা। দ্বিতীয় বাণিজ্যের, আমরা এক্সপোর্ট ডাইভারস্টিফিকেশন এবং বাণিজ্য বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা বা বাজার এক্সপ্লোর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুবো, তারা সে ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা যে চুক্তি আগে হয়েছিল সেটার সঙ্গে আরও ২০০ মিলিয়ন যোগ করা হয়েছে। আগে যা ছিল তার সঙ্গে এটি যুক্ত হয়েছে। তার মানে আরো বাড়তি টাকা তারা দেবে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা চেয়েছি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সব আলাপ হয়েছে। আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা‌নো হয়, ইউএসএআইডির স‌ঙ্গে ২০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। ডেভেলপমেন্ট অবজেক্টিভ গ্রান্ট এগ্রিমেন্ট (ডিওএজি)-এর ষষ্ঠ সংশোধনী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ. কে. এম শাহাবুদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং রিড জে. এশলিম্যান, মিশন পরিচালক, ইউএসএআইডি সংশোধনীতে স্বাক্ষর করেন।

অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের নব উদ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়াকে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা করব। এ লক্ষ্যে শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে তাদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে আমাদের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।’

২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-২০২৬  সালের  জন্য জিওবি এবং ইউএসএআইডির মধ্যে একটি নতুন ডিওএজি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ডিওএজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইউএসএআইডি মোট ৯৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৫ম সংশোধনী পর্যন্ত ইউএসএআইডি ৪২৫ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে। এবার ৬ষ্ঠ সংশোধনীর অধীনে ইউএসএআইডি ২০২.২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের একটি বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত এবং সম্পর্কিত সহায়তা শীর্ষক একটি চুক্তির অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র এবং শাসনের মতো বিভিন্ন খাতে আজ পর্যন্ত ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে।

এর আগে, শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডারসেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা আসে। দিল্লি সফর শেষে এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।

এর আগে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বৈঠকে তাঁরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়নে সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা এক পোস্টে এ কথা জানিয়েছে। 

পোস্টে বলা হয়েছে, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন আমাদের প্রতিনিধিদল। যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’ 

মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *