■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
জুলাই অভ্যুত্থান দমনে গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদপত্র ‘দ্য ন্যাশনাল’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এ কথা বলেন। দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটের (ডব্লিউজিএস) এক ফাঁকে তিনি এই সাক্ষাৎকার দেন।
তিনি বলেছেন, যদি শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের অপরাধের বিচার না করা হয়, তাহলে দেশের মানুষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমা করবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তাকে (হাসিনা) বিচারের আওতায় আনব। এটি অবশ্যই করা হবে, অন্যথায় জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না। শেখ হাসিনা ও তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আইনের মুখোমুখি করা হবে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ চেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তার আগে আন্দোলন দমনে তার সরকারের নীতিতে হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতকে জানানো হয়েছে বলেও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “আমরা ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে হবে।”
শেখ হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রমাণ থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার বিপুল পরিমাণ প্রমাণ আছে। যার মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টও অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘ এটিকে নথিভুক্ত করেছে এবং আমাদের কাছে শেখ হাসিনা, তার সরকার এবং ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের অপরাধের প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।
“আমরা ইতোমধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং আশা করছি, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিকে সচল করা। আমরা রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সাথে আলোচনা করছি- কোন সংস্কার এখন বাস্তবায়ন করা হবে, কোনটি ভবিষ্যতে হবে এবং কোন সংস্কার প্রস্তাব তারা গ্রহণ করতে চান না।”
এরপর একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করে এই সরকার বিদায় নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণ এটিকে উদযাপন করবে এবং আমাদের কাজ শেষ হবে।”
দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটে বক্তব্যে ড.ইউনূস বলেন, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়েজনের পথে এগোচ্ছে তার সরকর।
“আমার কাজ শেষ হলে, আমি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব।”
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এতে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতদের মধ্যে ১২ শতাংশ শিশু রয়েছেন। এ ছাড়া এ সময়ে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নিরাপত্তাবাহিনীর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আন্দোলনে ৮৪১ জন নিহত হয়েছেন। তবে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের এ তথ্য সম্ভবত অসম্পূর্ণ। কেননা এ সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা হতাহতদের ব্যাপক চাপ সামলেছেন। এ ছাড়া বেশকিছু মামলা সঠিকভাবে রেকর্ড করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে অন্তত ১৩ হাজার ৫২৯ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৯০ জন নারী রয়েছেন। এ ছাড়া এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অন্তত ১১ হাজার ৭০২ জন আটক হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আন্দোলনে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিল।