■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো মশাবাহিত জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ৪২ বছরের এক পুরুষ ও এক নারীর শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রাম নগরীর ইপিক হেলথ কেয়ার নামে একটি বেসরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় এই জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়।
যে দু’জনের শরীরে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে তারা হলেন-মো. জাবেদ (৪২) ও রিফাত আরা (৪২)। চট্টগ্রামের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ওয়ালিউল্লাহ ও মো. নুরুন্নবী তাদের ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে রোগী দু’জনকে পরীক্ষার জন্য এপিক হেলথ কেয়ারে পাঠান। সেখানে গতকাল (সোমবার) রাতে রিপোর্টে জিকার অস্তিত্ব মেলে। পরে বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানানো হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আক্রান্ত পুরুষের শরীর ব্যথা, জ্বর ও শরীর লালচে এবং আক্রান্ত নারীর জ্বর, হাত-পা ব্যথা ও ফুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। পরে তারা ইপিক হেলথ কেয়ারের ল্যাবে পরীক্ষা করান। সেখানে ওই রোগীদের রক্তে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্বের প্রাথমিক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জিকা ভাইরাসে শনাক্ত হওয়া দুইজনের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। তাদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত দুজনের শরীরে জ্বর, ব্যথা ও র্যাশ রয়েছে। এ ছাড়া হাত-পা ফোলা রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, জিকায় ডেঙ্গুর মতো জীবনঝুঁকি নেই। তবে গর্ভবতী নারীদের অনাগত শিশু অপরিপূর্ণ হয়। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা—তিনটিই এডিস মশার কামড়ে হয় বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার জানান। এদিকে জিকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে ৩০ জন চিকুনগুনিয়া রোগীও শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম।
আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশের মধ্যে কোনো উপসর্গই দেখা যায় না। তবে বাকি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে— চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ (র্যাশ), মাথাব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, মাংসপেশি ও গিঁটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো দেখা দেয়। এই উপসর্গ দুই থেকে সাতদিন স্থায়ী হতে পারে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, একই কীটে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। দুই জ্বরের রোগীর মধ্যে জিকার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় পরীক্ষার জন্য পাঠান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তখন দুজনের জিকা পজিটিভ আসে। এখন আইইডিসিআর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। কারণ, কোনো অপ্রচলিত বা বিরল রোগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ঘোষণা আইইডিসিআর দিয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, আইইডিসিআর যদি এই নমুনা আবার পরীক্ষা করতে চায়, তা–ও করতে পারে। নইলে আইইডিসিআর এপিকের পরীক্ষার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। তবে, এবারই প্রথম চট্টগ্রামে এই রোগ শনাক্ত হলো, যা স্থানীয়ভাবে জনস্বাস্থ্য সতর্কতার বিষয় হয়ে উঠেছে। জনসাধারণকে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।