:: ফেনী বুলবুল ::
ছোটখাটো বেসরকারি চাকুরী, অনিশ্চয়তা, মাথায় প্রফিট টার্গেটের ভারি চাপ, ছুটি নেয়ার সীমিত সুযোগ এইভাবেই কাটছে দিনগুলো। বহুবছর ঈদের আগের কিংবা পরের দিনগুলোতে গ্রামের বাড়ি থাকার সুযোগ হয় না। বেশিরভাগ সময়ই ঈদের ছুটি তিনদিন, তাতে করে ঈদের আগেরদিন গ্রামে ছুটে যাওয়া ঈদ করে পরেরদিন আবার ফিরে আসা। এই পাগলের মতো ছুটে যাওয়া আর ভাঙ্গা হৃদয়ে ফিরে আসাটাই এখন আমার ঈদ আনন্দ। কারন এই ঈদের প্রাক্কালে যখন বাড়ি পৌঁছায়ে আব্বা আম্মার অধীর অপেক্ষার অবসান ঘটাই তখন তাদের মুখে যে হাসি দেখতে পাই সেটাই মুছে দেয় ভ্রমনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সকল ক্লান্তি। আমিও এখন বাবা হয়েছি আমারও বয়স হয়েছে সন্তানের সান্নিধ্যের সুখ কি আমিও টের পাই, তাই বুড়া আব্বার দিকে তাকালে তার চেহারায় আমি আমার নিজের চেহারাটাই কেন যেন দেখতে পাই।
এইবারের ঈদ এমন এক সময় যখন কোভিড-১৯ এর কারনে সারা পৃথিবীটাই ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে। জানিনা এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারবো কিনা, আপনজনদের সাথে ঈদের নামাজ পড়ে কোলাকুলি করতে পারবো কিনা। কোলাকুলির ছলে আব্বাকে বুকে চেপে ধরতে পারবো কিনা। যদি না পারি তাহলে ভয় হয় আবার সকলে একসাথে পরের ঈদ করার সৌভাগ্য আমাদের হবে কিনা।জানা অজানা আশংকায় বুকটা বারবার কেঁপে উঠে, মনটা বিষাদে ভরে যায়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শৈশবের দিনগুলোই বারবার স্মৃতিতে রোমান্থিত হয়। শৈশব মানেই আনন্দের সময় আর ঈদ হলেতো কথাই নাই। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মের কারনে হোক অথবা আব্বার কঠিন নিয়ম কানুনের গ্যাড়াকলে হোক আমরা সব ঈদে নতুন জামা কাপড় খুব একটা পেতাম না। ছোট বেলায়ই আব্বা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন সুন্দর পোশাক মানেই নতুন নয় বরং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক। তাই ঈদে নতুন পোশাক পাওয়ার পরিবর্তে পুরাতন কোন পোশাক আগেই ধুয়ে লন্ড্রি দোকান থেকে ইস্ত্রী করে রাখতাম।এইভাবে না পাওয়ায় অভ্যস্ত হওয়ায় নতুন পোশাকের জন্য কখনোই যেমন মন খারাপ হতোনা তেমনই ঈদের আনন্দেও কমতি ছিলো না। শৈশব কৈশোরের ঈদের আনন্দ ছিল আমারা সমবয়সী তিন চাচাতো ভাই মিলে বৈরাগীর বাজার গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা আর আড্ডায় মেতে থাকা আর যৌবনের ঈদ ছিল বন্ধু বান্ধবের সাথে। এই দীর্ঘ সময়ে ঈদে পিতা মাতার সাথে কখনো সময় কাটিয়েছি বলে মনে পড়ে না। বিশেষ করে আব্বাকে এতোটাই ভয় পেতাম যে ঈদের দিনও আব্বার সামনে পড়তে চাইতাম না। হাসতে খেলতে খেলতে বেলা এতটাই গড়িয়েছে যে আব্বা আম্মাকে কতদিন পাবো অথবা আমিই কতদিন রবো সেটার কোনটাই এখন দূর্ঘটনা নয়।এই সীমিত সময়টাতে কেনজানি তাদেরকে কাছে পেতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছোঁয়ার অনুভূতি নিতে খুব ইচ্ছা করে, বুকের মাঝে ধরতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ঐ যে আব্বাকে পাওয়া ভয় আমার এই বয়সে এসেও কাটেনি। তাইতো এখন অপেক্ষায় থাকি ঈদের, কারন ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি করার সুযোগে সিনায় সিনা চেপে নির্ভয়ে আব্বাকে কিছুক্ষণ বুকে ধরে রাখতে পারি।
এইবারের ঈদ এমন এক সময় যখন কোভিড-১৯ এর কারনে সারা পৃথিবীটাই ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে। জানিনা এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারবো কিনা, আপনজনদের সাথে ঈদের নামাজ পড়ে কোলাকুলি করতে পারবো কিনা। কোলাকুলির ছলে আব্বাকে বুকে চেপে ধরতে পারবো কিনা। যদি না পারি তাহলে ভয় হয় আবার সকলে একসাথে পরের ঈদ করার সৌভাগ্য আমাদের হবে কিনা।জানা অজানা আশংকায় বুকটা বারবার কেঁপে উঠে, মনটা বিষাদে ভরে যায়।
ইয়া আল্লাহ, ইয়া মাবুদ আমরা তোমার গুনাহগার বান্দা। তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও, তুমি আমাদেরকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করো। আমাদেরকে আপনজনদের সাথে ঈদ করে সিনায় সিনা চেপে কোলাকুলি করার সুযোগ করে দাও। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।