:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
পুঁজিবাজারে নানা কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত কোম্পানি অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের টাকা মেরে বিদেশে পালিয়েছেন এমডি। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রফিক দীর্ঘদিন ধরে লাপাত্তা হয়ে আছেন। কোম্পানির পক্ষ থেকে বিষয়টি জানিয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাকে পরিচালনা পর্ষদের সামনে হাজির হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো আহ্বানেই সাড়া দেননি তিনি। বরং অজ্ঞাত স্থান থেকে ইমেইলে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন কোম্পানির কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাপোলো ইস্পাতের একাধিক জানিয়েছেন, মোঃ রফিক আসলে দেশে-ই নেই। তিনি কোম্পানির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সম্ভবত তিনি কানাডায় বসবাস করছেন এখন।
অ্যাপোলো ইস্পাত ২০১২ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসে। নানা কারসাজি আর প্রভাবশালীদের যোগসাজশে অত্যন্ত দূর্বল মৌলের কোম্পানিটি উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করে। আইপিওতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ারে ১২ টাকা প্রিমিয়াম নেওয়া হয়। প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ২২ টাকা দরে। বাজার থেকে উত্তোলন করা হয় ২২০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই টাকার বড় অংশই কোম্পানির কাজে না লাগিয়ে পরিচালকরা নানাভাবে আত্মসাৎ করে নেয়। তাতে এক পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে কোম্পানিটি।
এরই মধ্যে দুর্দশাগ্রস্ত অ্যাপোলো ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ রফিক হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান। কোনোভাবেই তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করে কোম্পানি। এরই মধ্যে চলতি বছরের ৯ মার্চ মোঃ রফিক অজ্ঞাত স্থান থেকে ই-মেইলে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ মার্চ কোম্পানির পক্ষ থেকে একাধিক জাতীয় দৈনিকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মোঃ রফিককে ২১ মার্চ, ২০২২ তারিখে বিকাল ৩টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত কোম্পানির রেজিস্টার্ড অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এ বিষয়ে যোগযোগ করলে কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক মোঃ হাসান জানান, থানায় জিডি এবং সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির পরও মোঃ রফিকের সাথে কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে মোঃ রফিকের ভাই মোঃ তৌফিকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার ভাই কোথায় আছেন, সে তথ্য তাদেরও জানা নেই। ভাইয়ের জন্য তারা বেশ উদ্বিগ্ন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মোঃ রফিক কোম্পানির বেশ কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু কত টাকা নিয়ে গেছেন সে সম্পর্কে তারা কোনো ধারণা দিতে পারেননি। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য, মোঃ রফিক কোম্পানির টাকা মেরে বিদেশে অভিবাসী হয়েছেন। তবে কত টাকা তিনি মেরে নিয়েছেন, তার প্রকৃত তথ্য হয়তো কখনোই জানা যাবে না। কারণ কোম্পানির অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম আগেই ভেঙ্গে পড়েছে। তাছাড়া তিনি যত টাকা নিয়ে গেছেন, তারচেয়ে বেশি টাকার দায় তার উপর চাপাতে পারেন কোম্পানির বর্তমান পরিচালকরা। কারণ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না কেউ।
কোম্পানির কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে এর স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তোলার প্রক্রিয়ায় আছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।