:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টের রায়ে ১০ বছরের দণ্ডিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমকে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রোববার বেলা তিনটার দিকে হাজি সেলিম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসেন। পরে ঢাকার বিশেষ আদালত-৭ এর বিচারক শহীদুল ইসলাম রায় ঘোষণা করেন।
রোববার শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৭-এর বিচারক শহিদুল ইসলাম জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিচারক বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ায় কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা পাবেন হাজি সেলিম। সেখানে তার সুচিকিৎসার বন্দোবস্তও করা হবে।
হাজি সেলিমের আত্মসমর্পণের দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আদারত এলাকায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়।
এদিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে যে কোনো শর্তে জামিনের আবেদন করেন হাজি মোহাম্মদ সেলিম।
আবেদনে হাজি সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে ওপেনহার্ট সার্জারির সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাকশক্তিহীন অবস্থায় রয়েছেন হাজি সেলিম। তিনি দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলে থাকলে চিকিৎসার অভাবে ও বাক-শক্তি না থাকায় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে যে কোনো শর্তে তার জামিন আবেদন করছি। জামিন পেলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই আপিল শর্তে আত্মসমর্পণ পূর্বক তার জামিন আবেদন করছি।
চিকিৎসা শেষে হাজি সেলিম দেশে ফেরার পর ২৫ মের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার বাধ্যবাধকতা ছিল।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া হাজি মো. সেলিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসার আগেই বাইরে অবস্থান নেন তার সমর্থকরা।
এর আগে, গত ২৫ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহালের রায় হাইকোর্ট থেকে নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
গত ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছর সাজা কমিয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায় প্রদান করেন বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।
রায়ে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান হাজি সেলিম। দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই সাজাপ্রাপ্ত হাজি সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন শুরু হয়।
প্রশ্ন উঠে, আদালতের এই পূর্ণাঙ্গ রায়ের পরে হাজি সেলিমের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কী না বা তাকে এই পদে রাখা নৈতিক বিবেচনায় কতটা সমর্থনযোগ্য হবে?
সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন সাংসদ নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে। আর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুযায়ী তার সাজার রায় স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি এমপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, সাজা বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সেটি দুদকের পক্ষ থেকে স্পিকারের কাছে পাঠানো হবে। এরপর স্পিকার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল পৃথক দুটি ধারায় হাজি সেলিমকে ১০ বছর ও তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর হাইকোর্টে আপিল করেন হাজি সেলিম।