:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই দলের প্রধান ইমরান খানকে গ্রেফতার করেছে দেশটির ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো।
গ্রেফতারের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি কালো ভিগো গাড়িতে করে নিয়ে গেছে।
ইসলামাবাদ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. আকবর নাসির খান সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও জানান তিনি।
ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে চারজনের বেশি জমায়েত।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলার একটির শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি।
ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) নেতারা দলীয় কর্মী–সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার ডাক দিয়েছেন।
তবে গ্রেফতারের পর ইমরানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে রাখা হয়েছে নাকি অন্য কোথাও নেওয়া হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ইসলামাবাদ পুলিশের টুইটার পেজে জানানো হয়েছে, ‘আল–কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
ইমরান খানের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ইমরান ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করেন। তবে মতবিরোধের জেরে সেনাবাহিনী সমর্থন প্রত্যাহার করলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাঁকে অপসারণ করা হয়।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত নাজুক। ইমরান খান অপসারিত হওয়ার পর গঠিত জোট সরকারের অবস্থানও নড়বড়ে। আর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান আগাম নির্বাচন আয়োজনে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। যদিও শাহবাজ শরিফ সরকার এখনো নিজ অবস্থানে অনড়।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে লাহোরে এক সমাবেশে ইমরান খান আবারও দাবি করেন, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসের গত বছর তাঁকে গুপ্তহত্যার চক্রান্ত করেন। এরপর একটি সমাবেশে ইমরানকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। তবে গুলি তাঁর পায়ে লাগে।
এদিকে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর গতকাল এক বিবৃতিতে ইমরানের ওই অভিযোগ খারিজ করে বলেছে, এ বানোয়াট ও বিদ্বেষপূর্ণ অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।
গ্রেফতার হওয়ার আগে ইমরান খানের ভিডিওবার্তা
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেফতার হবার আগে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন।
পাকিস্তানি সাংবাদিক এহতেশাম উল হক তাঁর টুইটার থেকে ইমরান খানের দেওয়া ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেছেন।
ভিডিওবার্তায় কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান বলেন, ‘যতক্ষণে আমার কথা আপনাদের কাছে পৌঁছাবে, ততক্ষণে একটি অবৈধ মামলায় আমাকে বন্দী করা হবে। পাকিস্তানে আমাদের মৌলিক ও আইনি অধিকারের দাফন হয়ে গেছে। এরপর হয়তো আপনাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হবে না। তাই দু-তিনটি কথা বলতে চাই।’
ইমরান খান বলেন, ‘প্রথমত, পাকিস্তানের মানুষ আমাকে ৫০ বছর ধরে চেনে। আমি কখনোই পাকিস্তানের আইনের বিরুদ্ধে যাইনি বা নিয়ম ভাঙিনি। ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমি যত লড়াই করেছি তা আইনের গণ্ডির ভেতরে থেকে করেছি। এখন যা হচ্ছে সেটা আমি আইন লঙ্ঘন করেছি বলে হচ্ছে না, এসব করা হচ্ছে যাতে করে আমি সত্যের পথ থেকে পিছু হটি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত চোরের দল ও আমদানি করা (বিদেশি মদদে ক্ষমতায় আসা) সরকারকে যেন আমি মেনে নিই।’
দুই মিনিট ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিওবার্তার শেষ ইমরান বলেন, ‘আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন, ন্যায়ের জন্য লড়তে সবাই পথে নামুন। স্বাধীনতা কাউকে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় না, এর জন্য লড়াই ও পরিশ্রম করতে হয়। এখন সময় এসেছে পথে নামার।’
ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ার পর পিটিআই নেতারা কর্মী–সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার ডাক দিয়েছেন।
নির্যাতনের অভিযোগ পিটিআই নেতাদের
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের সময় নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতারা।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তানি রেঞ্জার্সের সদস্যরা।
গ্রেফতারের সময় আদালত প্রাঙ্গণে ছিলেন ব্যারিস্টার গোহার খান। তিনি অভিযোগ করেছেন, ইমরানকে নির্যাতন করা হয়েছে। তারা ইমরানের মাথায় ও পায়ে আঘাত করেছে। গ্রেফতারের সময় তার হুইলচেয়ার ছুড়ে ফেলা হয়।
পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যান ফাওয়াদ চৌধুরী টুইটারে অভিযোগ করেছেন, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট র্যাঞ্জাররা দখল করেছে এবং আইনজীবীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইমরানের গাড়ি ফেলা হয়েছে।
পরে আরেকটি টুইটে তিনি অভিযোগ করেছেন, আদালত প্রাঙ্গন থেকে ইমরানকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে। তাকে অজ্ঞাত মানুষেরা অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে গেছে।
দলটির অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ইমরানের আইনজীবীর একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা
পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার। অভিযোগ, পিটিআই সরকারের আমলে ইমরান ও তার স্ত্রী অবৈধভাবে ৫০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি এবং কয়েক শত কানাল জমি গ্রহণ করেছেন।
গত ১৪ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ অভিযোগ করেন, একটি মানি লন্ডারিং মামলায় রিয়েল এস্টেট ফার্ম বাহরিয়া টাউনকে ‘সুরক্ষা প্রদানের’ বিনিময়ে ইমরান খান ও তার স্ত্রী জমি এবং নগদ অর্থ গ্রহণ করেছিলেন। ফার্মটি যুক্তরাজ্যে এক পাকিস্তানি নাগরিকের কাছে অবৈধভাবে ৫০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি স্থানান্তর করে।
সানাউল্লাহ বলেন, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি অবৈধভাবে অর্থ হস্তান্তরের বিষয়টি চিহ্নিত করেছে। তার দাবি, এই ৫০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি এবং জাতীয় কোষাগারের অন্তর্গত।
সানাউল্লাহর বরাত দিয়ে সে সময় দ্য ডন জানায়, বাহরিয়া টাউন তার ৫০ বিলিয়ন রুপি সরকার দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ার পরে একটি চুক্তি করে যেখানে ইমরান এবং তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ট্রাস্টকে ৪৫৮ কানাল (৮ কানালে ১ একর) জমি বরাদ্দ দেয়, যার কাগজে কলমে মূল্য ৫৩০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি।