:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার এসএসসিতে গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, যশোর বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি হস্তান্তর করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হয়।
দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তবে দুপুর ১২টার পর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এবং অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশ করা হয়।
গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের গড় হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ জন ছাত্র এবং ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন ছাত্রী।
গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়ে পরীক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন।
ছাত্রদের পাসের হার ৮৭.১৬ শতাংশ আর ছাত্রীদের পাসের হার ৮৭.৭১ শতাংশ।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, পরবর্তীতে সিলেটসহ দেশের কিছু এলাকায় বন্যার কারণে দুই দফায় পেছানো হয় পরীক্ষা। এসএসসির নির্ধারিত সূচি মার্চ মাস থেকে সাত মাস পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এ বছর দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে অংশগ্রহণ করছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২।
যেভাবে ফল জানা যাবে
আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে।
এই ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
এ ছাড়া মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমেও ফলাফল জানা যাবে। মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে SSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। উদাহরণ—SSC DHA 123456 2022 লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে ফল।
জিপিএ–৫ পেয়েছে ২,৬৯,৬০২ জন
চলতি বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ ৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। এবার মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ জন।
জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন আর ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন।
এছাড়া এবার গড়ে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। তবে গত বছর থেকে এই পাসের হার কম।
গত বছর এসএসসিতে পাস করেছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি।
এদিকে ২০২২ সালে এসে ছাত্রীরা জিপিএ ৫ পেয়েছে বেশি। এর সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন। অন্যদিকে ছাত্রদের মধ্য ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
৫০ স্কুলের সবাই ফেল
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এবার মোট ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৮।
এদিকে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। এবার মোট ২ হাজার ৯৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে।
২৯৭৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস
দেশের মোট ২৯ হাজার ৬৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন পরীক্ষার্থী। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৯৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
বিদেশের ৮ কেন্দ্রে পাসের হার ৯৫.৮৭ শতাংশ
দেশের বাইরের ৮টি কেন্দ্র থেকে মোট ৩৬৩ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৪৮ জন। সেই হিসাবে কেন্দ্রগুলোতে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
২ লাখ ৫০ হাজার ৫১৮ জন শিক্ষার্থী পাস করেননি
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৫১৮ জন শিক্ষার্থী পাস করেননি। এরমধ্যে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়নি।
ফেল করা পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৪৭ জন এবং মেয়ে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭৩ জন।
গত বারের চেয়ে এবার এক লাখের বেশি ফেল করেছে। গত বছর ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪৯ শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।
ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯০.০৩ শতাংশ
এ বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার গত বছরের চেয়ে কমেছে।
এ বছর ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৯৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
রাজশাহী বোর্ডে সাত বছরে সর্বনিম্ন পাসের হার
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার কমেছে। গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পাস করেছে এবার। এবছর বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। তবে পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম এ ফলাফল প্রকাশ করেন।
এবছর বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যেখানে গতবছর ছিল ৯৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪২ হাজার ৫১৭ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৭ হাজার ৯০৯ জন।
এবার রাজশাহী বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার ১২৪ জন। পাস করেছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৫২১ জন।
তবে ছেলেদের তুলনায় বেশি পাস করেছে মেয়েরা। শতভাগ পাস করেছে ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শতভাগ ফেল করেছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
পাসের হার ২০২০ সালে ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল বলে জানা গেছে।
মাদ্রাসায় পাসের হার ৮২.২২ শতাংশ
এসএসসির সমমান দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ।
দাখিলের ফল পেতে Dakhil লিখে স্পেস দিয়ে Mad লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2022 লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। আর কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে SSC লিখে স্পেস দিয়ে Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2022 লিখে 16222 নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে ফলাফল পাওয়া যাবে।