:: তারেক চৌধুরী ::
হাতে অফুরন্ত সময়। লিখতে বসলে যেকোন বিষয়েও লিখতে পারি , এই মনোবল আছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে চারিদিকে হা হুতাশ। মরলে কি হবে এটাই এখন সকলের একমাত্র জিজ্ঞাসা। আমার এতো চিন্তা করতে ভালো লাগে না। মরলে মরে যাবো। আল্লাহর কাছে চলে যাবো। কারণ মরার সার্টিফিকেট নিয়েই তো জন্মেছি। দেখলাম জুম টেকনোলজি কোম্পানীসহ কয়েকটি কোম্পানী মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড ইনকাম করছে, কেবল মাত্র করোনা ভাইরাসের কারণে , তাদের জন্য করোনা ‘শাপে বর’ হয়েছে।তাদের টেকনোলজি প্রতিদিন ব্যবহার করেন ২০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ। কোম্পানির বাজার মূল্য এখন প্রায় ২৯ বিলিয়ন পাউন্ড। আমার তো এতো জ্ঞান বুদ্ধি নাই যে ব্যবসা খুলে লাভ করবো। যদি মৃত্যু আল্লাহ লিখেই রাখেন তাহলে তো বাঁচার উপায় নাই। তাই মরলে ইসলাম ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী কি সুযোগ সুবিধা সেটা একটু চেক করে দেখলাম। মন্দ না, ব্যাপক সুযোগ সুবিধা। কোরান হাদিস এবং ফেসবুক ঘেটে যা জানতে পারলাম, তাই লিখবো আজকের দিন লিপিতে। আমি এখানে ধর্মীয় কোন ফতোয়া দিচ্ছি না বরং আমার উপলব্ধি এবং অর্জিত জ্ঞানটাকেই তুলে ধরছি। কেউ দ্বিমত করলে প্রমানসহ লিখবেন, আমি সংশোধন করে নেবো। সহীহ বুখারীর হাদিস অনুযায়ী প্লেগ রোগে মারা গেলে নিহতরা শহীদ হিসাবে গণ্য হবে।সেই অনুযায়ী ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন করোনা যেহেতু প্লেগের মত একটা মহামারী , সেজন্য করোনা রোগে মারা গেলেও মৃতগণ শহীদ বলে গণ্য হবেন। শহীদদের মৃত্যু ও দাফন কাফন নিয়ে কোরানে তেমন কিছু নেই। তবে হাদিসে কিছু তথ্য আছে। উইকিপিডিয়ায় এ ব্যাপারে রেফারেন্সসহ অনেক তথ্য আছে , যা আপনার জ্ঞানের ভান্ডার সম্মৃদ্ধ করবে।ওহুদের যুদ্ধে নিহতদের বা শহীদদের দুইজনকে এক কবরে রাখা হতো। সহীহ বুখারীর হাদিস অনুযায়ী তাদের গোসল ও জানাজা হতোনা , নবীর নির্দেশে। করোনা ভাইরাসের কারণে নিহতদের এখন এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ গোসল ও দাফন হচ্ছে না, যা শহীদের মর্যাদারই রূপান্তর।
অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে দেখলাম, ইসলামে শহীদ হওয়া মানে এই নয় যে, তাকে তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করে মরতে হবে। মানুষ অনেক ভাবে মারা যাওয়ার পরেও তাকে আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দিতে পারেন। সহীহ মুসলিমের একটি হাদিসে এসেছে , নবী মুহাম্মদ ( সঃ ) বলেছে ‘ যে কায়মনো বাক্যে আল্লাহর কাছে আর্জি করে যে শহীদ হতে চায় , আল্লাহ তাকে বিছানায় মৃত্যু বরণ করার পরও তাকে শহীদের মর্যাদা দিতে পারেন’। শহীদ হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে কয়েকটা হচ্ছে, প্লেগ বা মহামারীতে মারা যাওয়া , আগুনে বা পানিতে পড়ে মারা যাওয়া বা বিল্ডিং ধসে মারা যাওয়া এবং সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মারা যাওয়া । অনেক ইসলামিক পন্ডিত মনে করেন , যারা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তারাও শহীদ হিসাবে গণ্য হতে পারেন। এবার আসি শহীদ হওয়ার কি কি সুবিধা।
শহীদ হিসাবে মারা যাওয়া ইসলামী ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী একটি অন্যতম সম্মানের বিষয়। শহীদের যে পুরস্কার দেয়া হয় সেটা অন্যান্য পুরস্কার থেকে বেশি মর্যাদার। শহীদরা আল্লাহর কাছ থেকে ৭ ধরণের অনুগ্রহ ও মর্যাদা পেয়ে থাকে।
১) যখন তার শরীর থেকে এক। ফোটা রক্ত বের হয় তখন তার জীবনের সকল গুনা মাফ হয়ে যায়।
২) মৃত্যুর পূর্বে বেহেশতে তার রাজ প্রাসাদ দেখতে পাবে
৩) শহীদদের কবরের আযাব মাফ হবে। কবরে কোন পরীক্ষাও হবে না এবং শাস্তিও হবে না।
৪) কিয়ামতের মাঠে তার কোন ভয় থাকবে না।
৫) কিয়ামতের মাঠে তার মাথায় মুকুট পরা থাকবে এবং সেটা জ্বল জ্বল আলোর দ্যুতি ছড়াবে।
৬) শহীদরা স্বর্গের অন্যতম সুন্দরী বিয়ে করবে।
৭) শহীদরা তার পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে বেহেশতে নেয়ার সুপারিশ করতে পারবে। তাদেরকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে এবং বেহেশতে নিয়ে যেতে পারবে।
এতোক্ষণ লেখার পর মনে হলো আর দরকার নাই। কেউ কেউ বলবে আপনি ভুল জায়গায় হাত দিয়েছেন। এইসব বিষয়ে শুধু হুজুররা লিখবেন , এটা আপনার বিষয় নয়। তবে এইটা জানিয়ে রাখি , আমি মুসলিম ছাপলেন্সি নিয়ে মার্কফিন্ড ইনস্টিটিউট অব হাই আর এডুকেশনে ব্রিটেনে পড়া লেখা সুযোগ। হয়েছে । আর সেখান থেকেই ইসলামিক বিষয়ে আমার পড়ার আগ্রহ অনেক বেড়েছে।মুসলিম চাপলিন হিসেবে একটি কারাগারে প্লেসমেন্ট ও করেছি। আমি সমগ্র কোরান শরীফ বাংলা তর্জমাসহ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি। পড়ার বাহাদুরি করছি না , তবে ইসলামিক বিষয়ে লিখার আগে আমি অনেক পড়ার চেষঠা করি , এটা বলার চেষ্টা করছি। এই বিষয়ে আজ আর লিখছি না। ভুল ,বেয়াদবি এবং অহংকার হলে ক্ষমা প্রার্থী। তবে শহীদের মর্যাদা নিয়ে পড়তে গিয়ে অনেক জানলাম। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
রেডব্রিজ, যুক্তরাজ্য থেকে