:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে কংগ্রেস। ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে কংগ্রেস জিতেছে ১৩৬টির বেশি আসনে এবং তারা এগিয়ে রয়েছে। বিজেপি জয়ী হয়েছে ৬৫টিতে।
কর্নাটকের ২২৪ আসনের বিধানসভায় ‘ম্যাজিক ফিগার’ হচ্ছে ১১৩টি আসন, যা কংগ্রেস ছুঁয়ে ফেলা নিশ্চিত করে ভোট গণনা শুরু হওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই।
বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই ইতোমধ্যেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির নেতা-কর্মীরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমরা দাগ কাটতে পারি নি, কংগ্রেস পেরেছে।’
এতে করে কর্নাটকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে চলেছে কংগ্রেস। দিল্লিতে কংগ্রেস সদর দপ্তরের লনে ঢাকঢোল বাজিয়ে নাচানাচি শুরু করে দেয় সমর্থকরা। পটকা ফাটিয়ে, বাজনা বাজিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেন তারা।
এদিকে পরাজয় স্বীকার করে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। টুইটে তিনি বলেন, ‘কর্নাটক নির্বাচনে যারা আমাদের সমর্থন করেছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি বিজেপি কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমেরও প্রশংসা করতে চাই। আমরা আগামী দিনে আরও জোরালোভাবে কর্নাটকের সেবা করব।’
কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে তাদের প্রতি আমার শুভকামনা।’
এদিকে কর্নাটকে বিশাল জয়ের পরে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় রাহুল গান্ধী বলেন, ‘কর্নাটকে ঘৃণার বাজার বন্ধ হয়ে ভালোবাসার দোকান খুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, কর্নাটকে সরকার গঠনের পরই ভোটের আগে দেওয়া পাঁচটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে নতুন কংগ্রেস সরকার।
এদিকে কর্নাটকে বিজেপির পরাজয়ের খবরে টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কর্নাটকে মানুষকে এই জয়ের জন্য অভিবাদন। তারা পরিবর্তনের পক্ষে স্পষ্ট জনাদেশ দিয়েছেন। নির্লজ্জ স্বৈরাচার ও সংখ্যাগুরুবাদের রাজনীতি পর্যুদস্ত হয়েছে।’
এই নিয়ে পাঁচ মাসের মধ্যে দু’টি রাজ্য বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিল কংগ্রেস। গত ডিসেম্বরে হিমাচলপ্রদেশ এবং এই মে মাসে কর্নাটক।
জয় কেন, কী কারণে তার নানান ব্যাখ্যা নানা রাজনৈতিক মহলে হচ্ছে। একদল পর্যবেক্ষক বলছেন একটা বিষয় স্পষ্ট, বিজেপি হিজাব, হালাল, বজরংবলি—এই সবকিছু মিলিয়ে মেরুকরণকে তীব্র আকার দিয়েছিল। কিন্তু প্রচারে দেখা গিয়েছিল সেই দিকে না হেঁটে বিকল্প রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা শুনিয়েছিল। যেখানে ছিল মানুষের রুটিরুজির বিষয়। দেখা গেল কর্নাটকের মানুষ মেরুকরণের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
বিজেপির আসন সংখ্যা গোটা চল্লিশ কমলেও ভোট শতাংশে খুব একটা হেরফের হয়নি গতবারের তুলনায়। তার একটা কারণ হল, বিজেপি জনতা দল সেকুলারের ভোট বাক্সে কিছুটা ভাগ বসাতে সফল হয়েছে। যেখানে যেখানে মূল লড়াই ছিল জেডিএস বনাম বিজেপি, সেখানে গেরুয়া দলের সাফল্য বেশি। ফলে গতবারের ভোট শতাংশ ধরে রেখেছে। কিন্তু যেখানে মূল ল়ড়াই ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে, সেখানে বিজেপির ভোট শতাংশ কমেছে। ফলে কংগ্রেস গত বারের চেয়ে ৬ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে কার্যত স্যুইপ করেছে কর্নাটকে।
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের মতে, সেই কারণেই এই জয় তাৎপর্যপূর্ণ। কেন না বিজেপির সঙ্গে সন্মুখ লড়াইয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কংগ্রেসকে বেছে নিতে শুরু করেছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকে রাহুল গান্ধীর ভারতজোড়ো যাত্রার কথাও উল্লেখ করছেন। কর্নাটকের বহু জনপদ ছুঁয়ে গিয়েছিল রাহুলের সেই যাত্রা। যেখানে রাহুল বারবার বলেছিলেন, “আমি রাজনীতির অভিমুখ বদলের জন্য হাঁটছি।” পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ ধর্ম, জাতপাত, বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের অভিমুখে রাজনীতিকে ঘোরাতে চেয়েছিলেন তিনি।