:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় এসে দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে রাত থেকেই থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
গত ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে ২ ডিসেম্বর নিম্নচাপে এবং পরের দিন ৩ ডিসেম্বর গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় ধেয়ে আসে। রূপ নেয় মিগজাউম নামের ঘূর্ণিঝড়ে।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবেই আবহাওয়ায় শীতের প্রভাব কম পড়েছে। এখন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমতে কমতে শেষ হয়ে যাবে এবং প্রবল হয়ে উঠবে শীত।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম হল একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, যা ২০২৩ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে মৌসুমের পঞ্চম ঘূর্ণিঝড় ছিল। মিগজাউম নামটি মায়ানমারের দেওয়া। এটি বার্মিজ শব্দ, যার অর্থ ‘একটি বড়, শক্তিশালী ঈগল’।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন।
আগামীকালও বৃষ্টির সম্ভবনা আছে তবে এরপর দিন থেকে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরে ও উড়িষ্যা রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া, দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলা ও আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আগামীকাল শুক্রবার সারাদেশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার পাশাপাশি আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দেশে রাতের তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি বাড়তে পারে।
আবহাওয়া বুলেটিনে আরও জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যান চলাচল আরও কমেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
গণপরিবহনের স্বল্পতায় অনেককে হাঁটতে দেখা গেছে।
অফিসগামীরা, বিশেষ করে বেসরকারি খাতে কর্মরতদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সমুদ্রবন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে আজ (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আজ সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর গুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে যশোরে ২৬ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ১০, রাজশাহীতে ১০, রংপুরে ২, ময়মনসিংহে ১, সিলেটে ২, চট্টগ্রামে ১, খুলনায় ১ মিলিমিটার এবং বরিশালে সামান্য বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, এই বৃষ্টির ধারা আগামীকাল শুক্রবারও সারা দেশে বর্ষিত হবে। শনিবার থেকে বৃষ্টি কমে আসবে। সম্ভবত রোববার থেকে মেঘ কেটে মুখ দেখাবে সূর্য। ধরণি রোদের স্পর্শ পেলেও শুরু হবে শীতের প্রভাব। তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি কমে যাবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা তারপর আপাতত নেই।
এর আগে ১৭ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ উপকূলে দুর্বল হয়ে চলে যায় ‘হামুন’। মিধিলি নামটা ছিল মালদ্বীপের দেওয়া, আর হামুন ইরানের। পরের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হবে ‘রেমাল’, এটা ওমানের দেওয়া।
তালিকা অনুযায়ী, তারপর আসবে পাকিস্তানের দেওয়া ‘আসনা’। বাংলাদেশের দেওয়া সর্বশেষ নামটি ছিল ‘বিপর্যয়’, দ্বিতীয় কলামের প্রথম নাম ছিল সেটি। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পরবর্তী নাম ‘অর্ণব’।