:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র তাণ্ডবে কক্সবাজারের টেকনাফে চারজন, সন্দ্বীপে একজন, মিরসরাইয়ে এক শিশু, টাঙ্গাইল একজন ও শরিয়তপুরে একজনসহ মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলায় বসতঘরের মাটির দেয়াল চাপায় এক পরিবারের মা, তিন ছেলে-মেয়েসহ চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত চারজন হলেন-উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া মৃত ঠান্ডা মিয়ার ছেলে ফকির মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), ছেলে শাহিদুল মোস্তফা (২০),মেয়ে নিলুফা ইয়াছমিন (১৫) ও সাদিয়া বেগম (১১)।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ৩টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া নামক এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপির) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও রাত আটটার পর থেকে কয়েক দফা ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া এলাকায় বসতঘরের মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারি এক পরিবারের ৪জন নিহত হয়েছেন।পরে খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন মাটি চাপাপড়া ৪জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দেওয়া হয়েছে।
রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ফকির মোহাম্মদ নিজে বসতঘরটি মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন। রাতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ঘরের উপরে ও চারিপাশে ত্রিপল দিয়ে ঘুমান সবাই।এরপর হঠাৎ রাত ৩টার দিকে ভারী বৃষ্টিতে মাটির দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে ফকির মোহাম্মদ ছাড়া বাড়ির সবাই মারা যান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী জানান, আমরা খবর শুনে তাদের দাফন কাফনের জন্য প্রথমিকভাবে আজকে নগদ ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। পরে আরো ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট দমকা বাতাসে গাছ পড়ে সিদরাতুল মুনতাহা আরিয়া (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় কাটাবিল এলাকার হাসমত আলী ভূঁইয়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুনতাহা ওই বাড়ির আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার মেয়ে।
মুনতাহার চাচা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, সবার অগোচরে বিকেলে বাড়ির সামনে গেলে একটি গাছ পড়ে আমার ভাতিজি গুরুতর আহত হয়। দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সন্দ্বীপে আবদুল ওহাব (৬০) নামে এক ব্যক্তি নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে প্যালিশ্যার বাজারের পূর্ব পাশে রাস্তায় একটি গাছের ডাল ভেঙে তার মাথার ওপর পড়ে। উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেল সাড়ে ৪টায় তার মৃত্যু হয়। নিহত আব্দুল ওহাব মগধরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার বাবার নাম আব্দুল লতিফ।
শরীয়তপুরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসে একটি গাছ উপড়ে গিয়ে জুলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধার ওপর পড়ায় বৃদ্ধা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। শুক্রবার বিকেলে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের বালিকুড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত জুলেখা বেগম (৬৫) একই এলকার মৃত সাত্তার আলী বেপারীর স্ত্রী।
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক কাপড় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে বাসাইলের ইউএনও পাপিয়া আক্তার জানান। নিহত আব্দুর রাজ্জাক (৪০) উপজেলার মিরিকপুর গ্রামের কুসুম মিয়ার ছেলে।
তিনি বাসাইল বাজারের কোটিপতি মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ইউএনও জানান, আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে পৌঁছলে দমকা বাতাসে একটি মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে তার মাথায় পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসক নাঈম আব্দুল্লাহ বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই আব্দুর রাজ্জাক মারা যান। স্বজনরা এসে তার লাশ নিয়ে গেছে।
মিধিলির তাণ্ডবে ট্রলার ডুবে বরগুনার ৮ জেলে নিখোঁজ
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কবলে পড়ে বরগুনায় মায়ের দোয়া নামের একটি ট্রলার ডুবে গেছে ভেতরে থাকা ১২ জেলের ৮ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। ৪ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।
বঙ্গোপসাগরে মায়ের দোয়া নামের একটি ট্রলারে ১২ জন জেলে মাছ শিকার করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় ৪ জন জেলেকে ভাসমান অবস্থায় অন্য আরেকটি মাছধরা ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করে পটুয়াখালীর মহিপুরে নিয়ে আসে। বাকি ৮ জেলের এখনও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে নিখোঁজ এক জেলে পাথরঘাটা উপজেলার বড় টেংরা এলাকার আবুল কালাম কালু।
নিখোঁজ জেলে আবুল কালাম কালুর মেয়ে ফাতিমা রিমু বলেন, “আমার বাবা ৪ দিন আগে সাগরে মাছ শিকারে যায়। গতকাল ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরে ওই ট্রলারটি ডুবে গিয়ে আমার বাবা নিখোঁজ হন। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।”
জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়া অনেক জেলের সন্ধান আমরা পাইনি। ডুবে যাওয়া মায়ের দোয়া ট্রলারের উদ্ধার হওয়া ৪ জেলে পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকার একটি মৎস আড়তে আছেন, এমন খবর পেয়েছি।”
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে বিদ্যুৎহীন সরাইলের ৮ ইউনিয়ন
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বাসিন্দারা এখনো বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। শনিবার (১৮ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আট ইউনিয়নে বিদ্যুৎ আসেনি। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে সদরসহ ছয়টি ইউনিয়নে বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আওতায়। এখানে গ্রাহক আছেন ৪৪ হাজার ৫০০ জন।
বিউবোর বেশির ভাগ গ্রাহক টানা ২৯ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। উপজেলা সদরে শুক্রবার ভোর পাঁচটায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে রাত ১টার পরে। এছাড়া পানিশ্বর, চুন্টা, শাহজাদাপুর, শাহবাজপুর, কালীকচ্ছ, নোয়াগাঁও ও পাকশিমুল ইউনিয়নে শুক্রবার ভোর পাঁচটায় বিদ্যুৎ গিয়ে এখনো আসেনি।
চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে বিদ্যুৎ নেই। এখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাইরুল হুদা চৌধুরী।
শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা মামুন খান বলেন, দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছি।
বিউবোর সরাইল উপজেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) আবদুর রউফ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে এখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে অন্যান্য জায়গার সমস্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, বিকেলের মধ্যে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সচল করা যাবে।