:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দাম কমাতে সকল প্রকার চিনি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া, চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
আজ রোববার এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আমদানিকৃত অপরিশোধিত চিনির জন্য প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনির জন্য প্রতি টনে ৬ হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিনির দাম কমিয়ে আনার জন্য প্রস্তাব দেওয়ার পর এনবিআর শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও নিয়ন্ত্রক শুল্ক কমানোর পর অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির সামগ্রিক আমদানি খরচ টনপ্রতি যথাক্রমে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও ৯ হাজার টাকা কমবে।
কয়েক মাস ধরেই দেশে চিনির বাজারে অস্থিরতা চলছে। সরবরাহ–সংকটের কারণে বাজারে দেখা দিয়েছে চিনির ঘাটতি। চিনির বাজারের অস্থিরতা কমাতে সরকার দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। বাজারে বর্তমানে প্যাকেটজাত চিনি বলতে গেলে পাওয়াই যাচ্ছে না। খোলা চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। আবার প্যাকেটজাত ও খোলা চিনি পাওয়া গেলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে তা বিক্রি হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে গত মাসে এনবিআরকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজ বাজারদরের তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকার বাজারে এখন প্রতি কেজি চিনির দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে চিনির দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চিনির শুল্ক কমানো না হলে সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর।
রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন অধিদপ্তরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, চিনি আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পঞ্চম সভায় শুল্ক কমানোর বিষয়টি ওঠে আসে।
বর্তমানে প্রতি টন চিনি আমদানিতে কাস্টম ডিউটি ৩ হাজার টাকা, সংরক্ষণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে চিনি আমদানি ডিউটি পরে প্রায় ৬১ শতাংশ।
গত অক্টোবর থেকে দেশের বাজারে চিনির সংকট চলছে। সরকার ও মিল মালিকেরা দফায় দফায় বৈঠক করে দাম নির্ধারণ করে। কিন্তু দুই দফায় কেজি প্রতি ১৭ টাকা দাম বাড়ানোর পরও বাজার স্থিতিশীল হয়নি। অবশেষে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিল সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানানো হয়, গত ছয় মাসে দেশে প্রায় দুই লাখ টন কম চিনি আমদানি হয়েছে। ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। এতে বাজারে চিনির সংকট তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন রমজানে বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে পণ্যটির আমদানিতে শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণের জন্য এনবিআরকে সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সংস্থাটিকে চিঠিও দেওয়া হয়। এরপরই চিনি আমদানিতে শুল্ক তুলে নিলো এনবিআর।