:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় একটি মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে মিরসরাই বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী বলেন, “দুর্ঘটনার খবর শুনেই আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেছে। আমরা ১১ জন মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।”
মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী একটি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায় মাইক্রোবাসটি। এতে ঘটনাস্থলে ১১ জন মারা যান। আহত হন তিনজন। হতাহতদের বাড়ি হাটহাজারীর আমানবাজার এলাকায় বলে জানা গেছে।
এ দুর্ঘটনার আরো অনেকে আহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, রেললাইন পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে নিয়ে যায় মহানগর প্রভাতী ট্রেন।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, খৈয়াছড়া ঝরনা নামের পর্যটন স্পট থেকে গোসল করে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি ধাক্কা দেওয়ার পর মাইক্রোবাসটিকে প্রায় এক কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায়। হতাহত সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ট্রেনটি ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী জানান, ট্রেনটি বড়তাকিয়া অতিক্রম করার সময় লাইনে উঠে যায় মাইক্রোবাসটি। এ সময় ইঞ্জিনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি কিছু দূর চলে যায়। লেবেল ক্রসিংয়ের বাঁশ ঠেলে মাইক্রোবাসটি লাইনে ওঠে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ১১ জনের পরিচয় মিলেছে
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে শুক্রবার খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেলক্রসিংয়ে উঠে পড়া পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ছয় জন, যাদের পাঁচ জনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতদের ১০ জনই হাটহাজারীর জুগিরহাট আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের ছাত্র-শিক্ষক। বাড়ি হাটহাজারীর আমানবাজার খন্দকিয়া গ্রামে। তারা খৈয়াছড়া ঝরনা দেখে ফিরছিলেন।
নিহতরা হলেন- আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মোস্তফা মাসুদ রাকিব (২৮), জিয়াউল হক সজীব (২৮), রিদোয়ান চৌধুরী (৩১) ও ওয়াহিদুল আলম জিসান (৩২)। শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার্থী হিশাম (১৮), আয়াত (১৮), মারুফ (১৭), তাসফির (১৮) ও হাসান (১৯)। নিহত অন্যজন হলেন- মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা (৩৫), তিনি হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী এলাকার বাসিন্দা।
আহতরা হলেন- তাছমীর পাভেল (১৬), মো. মাহিম (১৮), মো. সৈকত (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯) ও মাইক্রোবাসের চালকের সহকারী তৌকিদ ইবনে শাওন (২০)। তারা চমেক হাসপাতালের ২৪ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
যা বললেন বেঁচে যাওয়া যাত্রী
দুর্ঘটনার কবলে পড়া মাইক্রোবাসটিতে ছিলেন হাটহাজারীর কলেজছাত্র তানভীর হাসান হৃদয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এখন। তবে এই দুর্ঘটনায় তার ১১ সহযাত্রীকে হারিয়েছেন।
হাসপাতালে তানভীর হাসান হৃদয় জানান, আমানবাজারের আর অ্যান্ড জে প্রাইভেট কেয়ার নামে কোচিং সেন্টারে তিনি পড়তেন। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে শিক্ষক ও ছাত্রসহ তারা ১৮ জন মাইক্রোবাসে করে খৈয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে গিয়েছিলেন।ফেরার পথে দুপুর সোয়া ১টার দিকে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় দুর্ঘটনার কবরে পড়েন তারা।
হৃদয় আরও বলেন, গাড়িতে চালকসহ আমরা ১৫ জন ছিলাম। তাদের মধ্যে আমাদের কোচিংয়ের শিক্ষক জিসান, রিদোয়ান, রাকিব ও সজিব স্যার ছিলেন। আমি গাড়িতে ঘুমিয়েছিলাম। দুর্ঘটনা কখন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে কিছু মনে নেই। ঘটনার পর অজ্ঞান ছিলাম আমি।
৪ ঘণ্টা পর সেই মাইক্রোবাস অপসারণ
দুর্ঘটনার চার ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলসড়কে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেল ৫টায় বড়তাকিয়া স্টেশন মাস্টার মো. শামসুদ্দোহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম এসে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে।
এর আগে প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টা করেও মাইক্রেবাসটি সরাতে ব্যর্থ হয় মিরসরাই ও সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা।
দুর্ঘটনাস্থলে সিগন্যাল, লাইনম্যান কোনোটাই ছিল না
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার উত্তরে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো লাইনম্যান ছিলেন না। সড়কের ওপর লেভেল ক্রসিংয়ে ছিল না সিগন্যাল। এ কারণে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই রেললাইনের ওপর উঠে যায় মাইক্রোবাসটি। এতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন মাইক্রোবাসের ১১ আরোহী। আজ শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বেলা তিনটার দিকে ওই ট্রেনের যাত্রী মো. কলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মাইক্রোবাসটি মহাসড়কের দিকে চলে যাচ্ছিল। বৃষ্টিও পড়ছিল। সড়কের লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না। লাইনম্যানও ছিলেন না। ফলে কোনো বাধা ছাড়াই মাইক্রোবাসটি রেললাইনের ওপর উঠে যায়। তখন মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা লাগে।
মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহী নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দুপুরের দুর্ঘটনার পর এই কমিটি গঠন করা হয়। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির প্রধান ও বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনা কেন ঘটেছে এবং কার দায় রয়েছে, তা জানতে কমিটি কাজ করবে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন রেলের বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল হামিদ, বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। অন্য দুই কর্মকর্তার নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।