:: নীলফামারী প্রতিনিধি ::
তিস্তার গজলডোবা ব্যারেজ দিয়ে বাংলাদেশের দিকে রেকর্ড পরিমাণ পানি ছেড়েছে ভারত। এতে বন্যার আশংকা করা হচ্ছে বাংলাদেশের তিস্তা সংলগ্ন এলাকায়।
তিস্তার গজলডোবা ব্যারেজ দিয়ে বাংলাদেশের দিকে রেকর্ড পরিমাণ পানি ছেড়েছে ভারত। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ১ হাজার ৬৪৭ কিউসেক এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৮ কিউসেক পানি বাংলাদেশের দিকে ছাড়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সেচ দপ্তরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সেচ অধিদপ্তর তিস্তা সংলগ্ন ভারতের সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সর্তকতা জারি করা হয়েছে। আর দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকায় জারি করেছে লাল সতর্কতা।
গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সিকিম, দার্জিলিং ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলোতে চলছে ভারী বৃষ্টি। তিস্তা সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর জেলা জলপাইগুড়িতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৪৩ মিলি এবং শিলিগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২২৩ মিলি লিটার।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার সমান দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার এবং বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার সন্ধ্যা ৬টায় তা আরো বেড়ে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উজানে ভারী বর্ষণ ও ভারতের গজলডোবায় তিস্তাার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় উজানের পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। পানির গতি নিয়ন্ত্রনে ব্যারাজের ৪৪টি গেইট খুলে দিয়েছে কতৃর্পক্ষ। অন্যদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় পানি আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
তিস্তা পাড়ের মানুষজন জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমিগুলোতে পানি উঠে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর সংখ্যা আস্তে আস্তে বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, আজ শুক্রবার সকাল থেকে হঠাৎ করে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। দ্রুত পানি বেড়ে ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ১৫টি গ্রামের ১০ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া উপজেলার পশ্চিম খড়িবাড়ি, কিছামত ছাতনাই, ঝাড় সিঙ্গেশ্বর, চর খড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, তিস্তা বাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, কেল্লাপাড়া ও ভেন্ডাবাড়ি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘আজ সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় বন্যাকবলিত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছে।’
তিস্তার পানিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিংঙ্গীমারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাাবিত হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফ-উদ-দৌলা বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। ব্যারাজের সবকটি গেইট খুলে পানির গতি নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উজানের বৃষ্টিপাত কমে না আসা পর্যন্ত পানি প্রবাহ কমার কোন সম্ভাবনা নেই।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, তিস্তার পানি বাড়ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সব রকমের প্রস্তুতি আছে বলেও জানান তিনি।