:: ইশতিয়াক হাসান ::
দু্ই বছর আগের নভেম্বরের কোনো এক দিন। দার্জিলিং পাড়ায় পৌঁছানোর আগেই আশ্চর্য এক শীতল হাওয়া শরীর জুড়িয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় ভারতের পাহাড়ি শহর দার্জিলিংয়ের কথা, যার নামে এই পাড়ার নাম।
পাড়ায় ঢুকে কয়েকটি বাড়ি পেরিয়ে চলে আসি মেঘলা দিদিদের কটেজে। অবশ্য পর্যটকদের থাকার কটেজ ও দিদিদের বাড়ি একসঙ্গেই। আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই। পাড়া প্রধান সাং সিং বমের মেয়ে মেঘলা দিদি। হাসি-খুশি এক তরুণী। পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার দেখভাল করেন তিনিই। আমাদের কামরা দুই তলায়। জানালা দিয়ে তাকালেই চোখে পড়ে প্রিয় কেওক্রাডং পাহাড়, আর এর গায়ে খেলনা বাড়ির মতো কটেজগুলো।
তবে আমার আজকের গল্প দার্জিলিং পাড়া নিয়ে নয় বরং এখানকার দুটি পাহাড় নিয়ে। এর একটি মেঘলা দিদিদের বাড়ির ঠিক পেছনেই। উচ্চতায় মাঝারি। সেখানে হয়েছিল আদার চাষ। ওই পাহাড়টাকে বড় ভালো লেগে গিয়েছিল, পাড়াটার মতোই। কারণ ওই পাহাড় থেকে গোটা পাড়াটা দেখা যায় পাখির চোখে। কেওক্রাডংও ধরা দেয় মোহনীয় চেহারায়।
ছোটবেলা থেকে ওই কেওক্রাডংকে জেনে এসেছিলাম দেশের সর্বোচ্চ চূড়া । এখন সত্যিটা জানলেও মানতে একটু কষ্টই হয়। কেওক্রাডং আছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশিখরের তালিকায় পাঁচ কী ছয়ে। তো কেওক্রাডংয়ের দিকে যেতে থাকা কিংবা পর্বতটা ভ্রমণশেষে ফিরতি পথ ধরা পর্যটকদের ছোট্ট এই পাহাড় থেকে পরিষ্কার চোখে পড়ে, বিশেষ করে পাড়ার মাঝের মাঠটা পেরোনোর সময়। যদিও এতো ওপর থেকে তাঁদের দেখায় লিলিপুটদের মতো।
আর এই পাহাড়ে ওঠেই পেছন দিকের উঁচু পাহাড়টায় চোখ আটকে গিয়েছিল। প্রাচীন সব গাছ-গাছালির রাজত্ব সেখানে। শুনেছিলাম ওই পাহাড়ে ভালুক আর মায়া হরিণদের রাজ্য। মেঘলা দিদিদের এই পাহাড়টা মানে যেখানে আদাসহ আরও অনেক কিছুর চাষ করেছিলেন তাঁরা, সেখানে ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়েয়ে থাকা ওয়াফিকার ছবিটা তোলা হয়। আর ওর পেছনের জঙ্গলাবৃত উঁচু পাহাড়টাই হলো ভালুকের সেই আস্তানা। শুনেছিলাম মেঘলা চিতাও নাকি আছে ওই আদিম অরণ্যে।
দুই পাহাড়ের গল্প বলার একটাই কারণ, আবার পাহাড়ে যেতে মন টানছে। কোথায় যাব ঠিক করি নি। তবে কেওক্রাডং রুটের বিখ্যাত গাইড বাবুল ভাইয়ের কাছ থেকে একটা কথা শুনে মনটা ভার, দার্জিলিং পাড়ায় নাকি এখন আর রাতে থাকতে পারেন না পর্যটকেরা। অথচ সেখানে আবারও দুটি, নিদেন পথে একটি রাত কাটাবার বড় ইচ্ছার ছিল।