:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ভরিতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ফলে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দাঁড়াবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এক লাখ ১২ হাজার ৪৪১ টাকা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। বুধবার জুয়েলার্স সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪১ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৭ হাজার ৩০৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯২ হাজার ২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সবশেষ স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। যা ২৪ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। সে সময় ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকা, ২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৬ হাজার ২৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯০ হাজার ৮৬৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭৫ হাজার ৬৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
তবে, সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম দুই হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম দুই হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম এক হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম দুই হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ২৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করছে বাজুস।
গত ৪০ বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৩৩২ গুণ। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) দেওয়া তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে দেশে প্রতি ভরি গিনি সোনার দাম ছিল ১৭০ টাকা। ধারাবাহিকভাবে তা বেড়ে ২২ ক্যাডমিয়াম প্রতি ভরি স্বর্ণে দাম দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৪৫৩ টাকায়।
১৯৭০ সালে প্রতি ভরি গিনি স্বর্ণের দাম ছিল ১৫০ টাকা। ১৯৮০ সালে দাম হয় ৩ হাজার ৫০ টাকা। ১০ বছরে বৃদ্ধির হার ২১৩ শতাংশ। এর পরবর্তী ১০ বছরে আরও দুইগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯০ সালে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪০০ টাকায়। ২০০০ সালে ২২ ক্যাডমিয়াম প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা। সে হিসেবে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল এ এক দশকে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পায় মাত্র ৪০০ টাকা। এ সময়ে স্বর্ণের মূল্য অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল।
আর ২০১০ সালে ২২ ক্যাডমিয়ামের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৩৬ হাজার ১০০ টাকা। অর্থাৎ ২০০০ সালের পরবর্তী ১০ বছরে ভরিপ্রতি দর বাড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। যার হার প্রায় ছয়গুণ।
২০১১ সালে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৪৫৫ টাকা। আর্থাৎ এক বছর ব্যবধানে মূল্য বৃদ্ধি পায় ১৩ হাজার ৩৫৫ টাকা। ২০১২ সালে পর প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬০ হাজার ১৬২ টাকা হয়েছিল; যা দেশের ইতিহাসে সেই সময়ের সর্বোচ্চ দর ছিল।
২০১৩ সালের পর প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৪ সালে ৪৭ হাজার ১০০ টাকা। ২০১৫ সালে ৪৫ হাজার ৪৩৬ টাকা। ২০১৬ সালে ৪৪ হাজার ৬৭৩ টাকা। ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারির দিকে ভরিপ্রতি (২২ ক্যারেট) স্বর্ণের দাম ছিল ৪৬ হাজার ৭৩ টাকা। ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি তা বেড়ে হয় ৫০ হাজার ৭৩৮ টাকা। এছাড়া ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ৪৮ হাজার ৯৮৯ টাকা। ২০১৯ সালের প্রথম দিন সোনার ভরি ছিল ৫৯ হাজার ১৯৫ টাকা। চার দিনের মাথায় তা বেড়ে হয় ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা। ওই বছর ১৪ বার সোনার দাম পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে আটবার বেড়েছে, কমেছে ছয়বার। শেষ পর্যন্ত প্রতি ভরির দাম বাড়ে ১২ হাজার ৩০৬ টাকা।
২০২০ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে এসে কিছুটা পতনের মধ্যে পড়ে। এতে ২৫ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৫০৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেট ৭০ হাজার ৬৮৪, ১৮ ক্যারেট ৬১ হাজার ৯৩৬ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
২০২১ সালে সোনার দাম খুব বেশি বাড়েনি। অর্থাৎ এই বছরের পুরো সময়টাতে প্রতি ভরিতে বেড়েছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। তবে বছরজুড়েই প্রতি ভরি ৭০ হাজার টাকার উপরে বেচাকেনা হয়েছে।
২০২২ সালের ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিপ্রতি নির্ধারণ করা হয় ৮৩ হাজার ২৮১ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি পড়ে ৭১ হাজার ৩৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৯ হাজার ৪৮৬ টাকা।