:: কাফি কামাল ::
বাস্তবতা উপলব্ধি করুন— গোয়ার্তুমি করবেন না—আল্লাহর ওয়াস্তে ঘরে থাকুন— নিরাপদে থাকুন— পরিবারকে নিরাপদে রাখুন— নিয়ম মানুন— অন্যকে মানতে উৎসাহিত করুন— মানব জীবন রক্ষার্থে এগিয়ে আসুন
প্রিয় স্বদেশবাসী, করোনা ভাইরাস মহামারীর ভয় আপনাদের নগর ছেড়ে গ্রামে যেতে বাধ্য করেছে। কিন্তু গ্রামে ফিরে আপনাদের অনেকেই নিজের ঘরে অবস্থান করছেন না। আপনারা পাড়ার চা দোকানে দলবেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন। তাস পেটানোয় মগ্ন হয়েছেন। আত্মীয়-স্বজনের ঘরে দাওয়াত খেয়ে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের সন্তানেরা পাড়ার মাঠে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলছে সমানে। কোয়ারেন্টাইন মানে তো উৎসব নয়। এই যদি করবেন তাহলে আপনাদের গ্রামে যাওয়ার কি দরকার ছিল! আপনারা এই সব করলেন মানে তো মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ করোনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখলেন।
প্রিয় স্বদেশবাসী, আমাদের বাংলাদেশে- বিশেষ করে প্রতিটি গ্রামে কিছু বয়স্ক লোক রয়েছেন। যারা কারো সতর্ক বানী শুনতে চান না। যারা মনে করেন জগতে তাঁরাই সবচেয়ে বুঝদার। মুরব্বিগণ, এই ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে প্রবীণদের। অন্য কোনো রোগে আক্রান্তরা বেশী কাবু হচ্ছেন, প্রাণ হারাচ্ছেন। ফলে আপনি নিজে যেমন ঝুঁকিতে আছেন, অন্যদের জন্যও ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছেন। অতএব, সতর্ক হোন। আবার গ্রামে কিছু মধ্যবয়সি আছেন যারা হামবড়া ভাব দেখান। অন্যের সতর্ক বার্তাকে আমলে নেন না। হে অগ্রজজন, নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গড় বয়স কিন্তু ৫৫ বছর। গ্রামে কিছু যুবক আছেন যারা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সতর্ক বার্তাগুলোকে গায়ের জোরে উড়িয়ে দেন। অনেক সময় সতর্ককারীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আপনাদের সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ করোনা ভাইরাস ক্ষমতাশালী-ক্ষমতাহীন, ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিম মানছে না। আপনার বেশি বুঝা, গোয়ার্তুমি, হামবড়া ভাব, গায়ের জোর দেখানো মনোভাব নিজের, পরিবারের পাশাপাশি প্রতিবেশী ও এলাকার জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। আপনি যেই হোন না কেন, অন্যের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার কোনো অধিকার আপনার নেই। এটা রীতিমতো অপরাধ। তাই অনুগ্রহ করে বাস্তবতা উপলব্ধি করুন।
প্রিয় স্বদেশবাসী, আমি আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র পরম করুনাময় আল্লাহ পাকই এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে মানবজাতিকে উদ্ধার করার ক্ষমতা রাখেন। আমাদের সবাইকে অবশ্যই তার প্রতি অনুগত হতে হবে, তার কাছে উদ্ধার চাইতে হবে। কিন্তু নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পরহেজগার ভাববেন না। আল্লাহ ভরসা বলে ইচ্ছা করে অসচেতনতায় ডুবে থেকে পরোক্ষভাবে আল্লাহর পরীক্ষা নেয়া কি আমাদের উচিত হবে? আমার বিবেচনায় বরং বোকামি হবে। উল্লেখ্য, মসজিদে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়ার ধৃষ্টতা দেখাবো না। তবে কেউ অসুস্থবোধ করার পরও মসজিদে গেলে অন্যেরা সংক্রমিত হতে পারে। আপনি সুস্থ থাকলেও কে ভাইরাস বহন করছে জানতে পারছেন না। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নামাজ ঘরে পড়াই ভালো হবে। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, তিনি নিশ্চয় আমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন।
প্রিয় স্বদেশবাসী, কোয়ারেন্টাইন কালে অতি জরুরি প্রয়োজনে আপনার দোকানপাট বা হাটবাজারে যেতে বাঁধা নেই। তবে সেটা অবশ্যই সুরক্ষা (মাস্ক ও গ্লাভস পরে) নিশ্চিত করে। অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি, দোকানপাটে আড্ডাবাজি, মাঠে খেলাধুলা করবেন না। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন দেখলেই হাত মেলাবেন না, বুকে জড়িয়ে ধরবেন না। এই অভ্যাস বদলে দূর থেকে সালাম-আদাব দিন, কুশল বিনিময় করুন। নির্দিষ্ট দূরত্ব রক্ষা করে চলুন। পরস্পরকে সতর্ক করুন, সচেতন করুন। নিজে নিরাপদে থাকুন। মনে রাখবেন, আপনি সুস্থ থাকলেই সুস্থ থাকবে আপনার পরিবার, প্রতিবেশী। আপনার মাধ্যমে যদি আপনার পরিবার, মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান আক্রান্ত হয় সেটা হবে সবচেয়ে দু:খের বিষয়।
প্রিয় স্বদেশবাসী, ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের প্রাণ হারাচ্ছে বেঘোরে। বুঝতে চেষ্টা করুন, বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে ও চিকিৎসা সুবিধা সংকটে ভোগা দেশে যদি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তার পরিণতি কতো ভয়াবহ হবে। তাই সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ- নিজে ভাল থাকুন, অন্যকে ভাল রাখুন।
লেখকঃ সাংবাদিক