পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি আ. লীগ নেতার

:: বাঁশখালী প্রতিনিধি ::

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী।

সোমবার হরতালবিরোধী মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই হুমকি দেন। বক্তব্যটি তিনি নিজের ফেসবুক লাইভেও প্রচার করেন। ভিডিওতে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়েও কটূক্তি করেন। 

চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় তিনি পিটার হাসের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন। সমাবেশে তাঁর দেওয়া সাড়ে ১৮ মিনিটের বক্তব্য ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ফেসবুকের ওই ভিডিও ৩ হাজার ৮০০ জন দেখেছেন।

বক্তব্যে তিনি বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করেন। এর আগে মুজিবুল হক চৌধুরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় ইভিএম বোতাম চেপে দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে তাঁর লোক থাকবে বলে আলোচনায় আসেন।

চাম্বলে আয়োজিত সমাবেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশে মুজিবুল হক বলেন, ‌’পিটার হাস বলেছেন— এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এই পিটার হাস, আমরা খাই পাঁচ আঙুলের ভাত। আর তুই খাস ফিডার। তুই হলি বিএনপির ভগবান। আর তোরে এমন পিটুনি দেব…। বাঙালি কি ফাজিল তা তো জানোস না। তোরা বিএনপি-জামায়াতের ভগবান হতে পারবি। তবে আমাদের একটি… ছিঁড়তে পারবি না।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএম না হলে আমি কাউকে খুঁজতাম না, ভোট আমিই মেরে দিতাম’, গত বছরের মে মাসে নির্বাচনি প্রচার চালাতে গিয়ে প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিলেন মুজিবুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, পিটার হাস আমাদের জন্য ভগবান হয়ে এসেছেন। এদিকে আমরা পিটার হাসকে ভগবান মানি না, আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ভগবান মানি। বিএনপির সঙ্গে এখন আবার যুক্ত হয়েছেন আরও একজন। তার নাম সুদি ইউনূস। যাকে আমরা ‘ডাক্তার ইউনূস’ বলি।

মুজিবুল আরও বলেন, ‘আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের বিরোধী ছিল। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিল, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিল। আপনারা যত কিছু করবেন করুন। বিএনপির ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারবেন, আমাদের একটা কেশও ছিঁড়তে পারবেন না।’

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘যখন বাংলাদেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে বারবার প্রত্যাখ্যান করছে, তাদের সন্ত্রাসী দল হিসেবে পুরো বিশ্বে প্রচার হয়েছে, তখন তারা গিয়ে বিদেশে ধরনা দিচ্ছে। জো বাইডেনের কাছে চলে যাচ্ছে। আরও অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের কাছে যাচ্ছে। এখন সবাই পিছু হটেছে। থেকে গেছে জো বাইডেন। কী জন্য থেকে গেছে? প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চেয়েছেন। আমাদের নেত্রী বলছেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। আমার ক্ষমতার দরকার নেই। আমি বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রি করব না।’

মুজিবুল হক চৌধুরী গত বছরের ১২ অক্টোবর চাম্বল ইউনিয়নের দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে গত ১৫ জুন চাম্বল ছাড়া বাঁশখালীর সব কটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনের প্রচারণার সময় চাম্বল ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী দফায় দফায় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন। বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তাঁর ইউপিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল।

গত বছরের ২৮ মে মুজিবুল হক চৌধুরী এক সভায় ‘বাটন টিপে দিতে কেন্দ্রে আমার লোক থাকবে’ মন্তব্য করেন। এরপর গত বছরের ২ জুন পুনরায় মুজিবুল হক চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘আমরা বললে সুষ্ঠু, আমরা না বললে অসুষ্ঠু। আঙুল তোমার, টিপ দেব আমি।’ তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্য ভোটের মাঠে পুনরায় ঝড় তোলে। এরপর নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি মুজিবের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। নানা বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মুজিবুল হক চৌধুরী ‘টিপ মারা মুজিব’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *