:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য পুতিনকে দায়ী করে আইসিসির একজন বিচারক শুক্রবার এ আদেশ দেন।
প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেন এক বছরের বেশি সময় ধরে আক্রমণ চালানো রাশিয়া একাধিকবার যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নারী মুখপাত্র বলেছেন, পুতিনের বিরুদ্ধে জারি গ্রেফতারি পরোয়ানার কোনও ধরনের তাৎপর্য নেই।
এর আগে রাশিয়া বলেছিল, তারা আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয় না। ফলে রাশিয়াকে বিচারের এখতিয়ার আদালতটির নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সহযোগিতায় তৈরি করা একটি তদন্তে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইউক্রেনে বিস্তৃত মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে রাশিয়া, যার মধ্যে রয়েছে জোরপূর্ব শিশুদের দেশান্তরিত করা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পরই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব একটি সঙ্কেত পেয়েছে— রাশিয়া হলো একটি অপরাধী দেশ এবং এর নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সহায়তাকারীদের তাদের সংঘটিত অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এটি ইউক্রেন এবং আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।’
২০১৬ সালে আইসিসি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। আদালতের একটি প্রতিবেদনে ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ডে একীভূত করার ঘটনাকে ‘দখল’ হিসেবে উল্লেখ করার পর আইসিসি থেকে বেরিয়ে যায় মস্কো। কারণ ‘দখল’ বলার ফলে রুশ পদক্ষেপকে ‘আগ্রাসন’ বলা যাবে।
আইসিসি’র সংজ্ঞা অনুসারে, কোনও রাষ্ট্র দখল, বোমাবর্ষণ বা বন্দরে অবরোধ করা আগ্রাসনের আওতায় পড়ে। কিন্তু যদি কোনও রাষ্ট্র আইসিসি’র অন্তর্ভুক্ত না হয় তাহলে দেশটির কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আগ্রাসনের অপরাধে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না।
এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আগ্রাসনের অভিযুক্ত দেশের বিচারের বিষয়টি আইসিসিতে পাঠাতে পারে। কিন্তু রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে দেশটির ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। ফলে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মতো অভিযোগের বিচারে রাশিয়ার মতো স্বাক্ষর না করা দেশের বিরুদ্ধে বিচারে কোনও বাধা নেই।
এমন সময় এই পরোয়ানার জারির খবর সামনে আসলো যখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মস্কো সফরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুই দেশের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও তলানিতে পৌঁছাবে।
পুতিনের আমন্ত্রণে ২০ থেকে ২২ মার্চ রাশিয়া সফর করবেন চীনা প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র জিনপিংয়ের মস্কো সফরকে ‘শান্তি মিশন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, বেইজিংয়ের প্রস্তাবিত যেকোনও শান্তি কাঠামো ‘একতরফা এবং এতে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পর নজিরবিহীন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে রাশিয়া।