:: তাহসিন আহমেদ ::
বিশাল এক বাড়িতে নিঃসঙ্গ ২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত আলোকচিত্রী প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগম। একমাত্র ছেলে আর তিন বছর বয়সী নাতনি তামাররা প্রিয়ন্ময়ীকে হারিয়ে একদম একা হয়ে পড়েছেন তিনি। নিজ ঘরের ঠিক পাশেই কবর দিয়েছেন ছেলে এবং নাতনির; যেন সারাদিন দরজায় বসে তাঁদের কবর দেখতে পারেন।
প্রিয়কের মা স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়েছেন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণে। ভবিষ্যৎ বংশধর কেউ নেই। তাঁর অবর্তমানে প্রিয়ক, প্রিয়ন্ময়ীর জন্য দু হাত তুলে দোয়া করার মত যেন কেউ থাকে সেজন্য ওয়াকফের মাধ্যমে সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে বিমান দুর্ঘটনার পর প্রাপ্ত ৫০ লক্ষ টাকার সিংহভাগ তিনি দান করে দেয়ার বাবস্থা করেছেন।
একমাত্র ছেলে আর নাতনীকে দুর্ঘটনা চিরদিনের জন্য হারানোর পর এভাবেই চলছে প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগমের জীবন।
অথচ, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের বাড়িতে প্রিয় একটি বাগান ছিল আলোকচিত্রী প্রিয়কের। বাড়ির ব্যালকনি থেকে দেখা যেত একটি ডালিম গাছ। সেই ডালিম গাছের নিচে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আলোকচিত্রী এফ এইচ প্রিয়ক। অথচ এই ডালিম গাছের নিচে বসে নেপাল ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেয়ার কথা ছিল তাঁর।
ছোট্টমণি তামাররা প্রিয়ন্ময়ী আলোকচিত্রী প্রিয়কের একমাত্র কন্যা। মাত্র ৩ বছর বয়সী এই ফুটফুটে শিশুটির খুব ইচ্ছে হয়েছিল বিমানে চড়ার। কে জানত বিমানে চড়ার শখ পূরণ করতে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হবে । প্রিয়ন্ময়ীর ইচ্ছা ছিল খেলনা ভর্তি লাগেজ নিয়ে দাদুকে গল্প শোনানোর। কিন্তু মৃত্যুর কাছে হার মেনে খেলনা ভর্তি লাগেজের বদলে কফিনবন্দি লাশ হয়ে তাঁকে ফিরতে হল দাদুর বাড়ি। নেপালের হাসপাতালে প্রিয়ন্ময়ীর ছোট্ট লাশটি দেখে কান্না ধরে রাখতে পারেননি চিকিৎসকরাও। খেলার জায়গা সেই ডালিম গাছের নিচে বাবার পাশে মাটির বিছানায় কাটাতে হবে ছোট্টমণি প্রিয়ন্ময়ীকে। দাফনের সময় ছোট্ট ওই শিশুটির লাশ যখন সামনে আনা হয় কেউই নিজেদের আবেগ সংবরণ করতে পারেনি। সবার চোখের কোণ ভিজে উঠেছিল কান্নায়। কেউ অঝোরে, কেউ কেঁদেছেন নীরবে।
প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগমের ইচ্ছে ছিল, বাসার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে যাতে জীবনের বাকিটা সময় ছেলে ও নাতনির কবর দেখে এবং দোয়া করে সময় কাটাতে পারেন- আর তাই এখানেই হলো তাদের শেষ শয্যা।
প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ীর জন্য ভালোবাসা। তাঁদের আত্মার মাগফেরাত ও পরকালের জীবনের শান্তি কামনা করছি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যে টাকা দিয়েছে বেশির ভাগই নিয়ে গেছে মরহুম প্রিয়কের স্ত্রী এ্যানী। সে এখন অন্য সংসার করছে। সাবেক শাশুড়ির খোঁজ নেওয়ার তার সময় নেই।